পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հ8O রবীন্দ্র-রচনাবলী হইল না। তোমার সকল আত্মীয়ের কথাই তো তোমার কােছ হইতে শুনিয়াছি- এ আত্মীয়ের তো কোনো বিবরণ শুনি নাই ।” অক্ষয় কহিল, “যোগেন, এ তোমার অন্যায়- মানুষের কি এমন কোনো কথা থাকিতে পারে না যাহা বন্ধুর কাছেও গোপনীয় ?” যোগেন্দ্র। কী রমেশ, অত্যন্ত গোপনীয় নাকি ? রমেশের মুখ লাল হইয়া উঠিল; সে কহিল, “ই গোপনীয়। এই মেয়েটির সম্বন্ধে আমি তোমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করিতে ইচ্ছা করি না ।” যোগেন্দ্র। কিন্তু দুৰ্ভাগ্যক্রমে, আমি তোমার সঙ্গে আলোচনা করিতে বিশেষ ইচ্ছা করি। হেমের সহিত যদি তোমার বিবাহের প্রস্তাব না হইত, তবে কার সঙ্গে তোমার কতটা-দূর আত্মীয়তা গড়াইয়াছে ತೌ ಹಾಕಿ তোলাপাড়া করিবার কোনো প্রয়োজন হইত না- যাহা গোপনীয় তাহা গোপনেই রমেশ কহিল, “এইটুকু পর্যন্ত আমি তোমাদিগকে বলিতে পারি— পৃথিবীতে কাহারও সহিত আমার এমন সম্পর্ক নাই যাহাতে হেমনলিনীর সহিত পবিত্র সম্বন্ধে বদ্ধ হইতে আমার কোনো বাধা থাকিতে পারে ।” যোগেন্দ্ৰ। তোমার হয়তো কিছুতেই বাধা না থাকিতে পারে, কিন্তু হেমনলিনীর আত্মীয়দের থাকিতে পারে। একটা কথা আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করি, যার সঙ্গে তোমার যেরূপ আত্মীয়তা থাকি-না কেন তাহা গোপনে রাখিবার কী কারণ আছে ? রমেশ । সেই কারণটি যদি বলি, তবে গোপনে রাখা আর চলে না। তুমি আমাকে ছেলেবেলা হইতে জান- কোনো কারণ জিজ্ঞাসা না করিয়া সুদ্ধ আমার কথার উপরে তোমাদিগকে বিশ্বাস রাখিতে হইবে । যোগেন্দ্র । এই মেয়ের নাম কমলা কি না ? রমেশ । ইহা । যোগেন্দ্ৰ । ইহাকে তোমার স্ত্রী বলিয়া পরিচয় দিয়াছ কি না ? রমেশ । ইয়া, দিয়াছি। যোগেন্দ্র। তবু তোমার উপরে বিশ্বাস রাখিতে হইবে ? তুমি আমাদিগকে জানাইতে চাও এই মেয়েটি তোমার স্ত্রী নহে, অন্য সকলকে জানাইয়াছ এই তোমার স্ত্রী- ইহা ঠিক সত্যপরায়ণতার দৃষ্টান্ত নহে। অক্ষয়। অর্থাৎ বিদ্যালয়ের নীতিবোধে এ দৃষ্টান্ত ব্যবহার করা চলে না, কিন্তু ভাই যোগেন, সংসারে দুই পক্ষের কাছে দুইরকম কথা বলা হয়তো অবস্থাবিশেষে আবশ্যক হইতে পারে। অন্তত তাহার মধ্যে একটা সত্য হওয়াই সম্ভব। হয়তো। রমেশবাবু তোমাদিগকে যেটা বলিতেছেন সেইটেই সত্য । রমেশ । আমি তোমাদিগকে কোনো কথাই বলিতেছি না। আমি কেবল এই কথা বলিতেছি, হেমনলিনীর সহিত বিবাহ আমার কর্তব্যবিরুদ্ধ নহে। কমলা সম্বন্ধে তোমাদের সঙ্গে সকল কথা আলোচনা করিবার গুরুতর বাধা আছে- তোমরা আমাকে সন্দেহ করিলেও সে অন্যায় আমি কিছুতে করিতে পারিব না। আমার নিজের সুখ-দুঃখ মান-অপমানের বিষয় হইলে আমি তোমাদের কাছে গোপন করিতাম না, কিন্তু অন্যের প্রতি অন্যায় করিতে পারি না । যোগেন্দ্র । হেমনলিনীকে সকল কথা বলিয়াছ ? রমেশ । না । বিবাহের পরে তাহাকে বলিব এইরূপ কথা আছে- যদি তিনি ইচ্ছা করেন, এখনো তঁহকে বলিতে পারি। যোগেন্দ্ৰ। আচ্ছা, কমলাকে এ সম্বন্ধে দুই-একটা প্রশ্ন করিতে পারি ? রমেশ । না, কোনোমতেই না। আমাকে যদি অপরাধী বলিয়া জ্ঞান কর। তবে আমার সম্বন্ধে যথোচিত বিধান করিতে পাের, কিন্তু তোমাদের সম্মুখে প্রশ্নোত্তর করিবার জন্য নির্দোবী কমলাকে দাড়