পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S88 রবীন্দ্র-রচনাবলী অন্নদাবাবু নির্বক বিস্ময়ে চাহিয়া রহিলেন। কিছুক্ষণ পরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কার স্ত্রীর সঙ্গে *5िग्न शैल ?' যোগেন্দ্র। রমেশের স্ত্রী । অন্নদাবাবু। তুমি কী বলিতেছ, আমি কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না। কোন রমেশের স্ত্রী। যোগেন্দ্র। আমাদের রমেশের। পাঁচ-ছয় মাস আগে যখন সে দেশে গিয়াছিল, তখন সে বিবাহ করিতেই গিয়াছিল । অন্নদাবাবু! কিন্তু তার পিতার মৃত্যু হইল বলিয়া বিবাহ ঘটতে পারে নাই। যোগেন্দ্ৰ। মৃত্যুর পূর্বেই বিবাহ হইয়া গেছে। অন্নদাবাবু স্তব্ধ হইয়া বসিয়া মাথায় হাত বুলাইতে লাগিলেন। কিছুক্ষণ ভাবিয়া বলিলেন, “তবে তো আমাদের হেমের সঙ্গে তাহার বিবাহ হইতেই পারে না ।” যোগেন্দ্র । আমরা তো তাই বলিতেছিঅন্নদাবাবু। তোমরা তো তাই বলিলে, এ দিকে যে বিবাহের আয়োজন সমস্তই প্রায় ঠিক হইয়া গেছে- এ রবিবারে হইল না বলিয়া পরের রবিবারে দিন স্থির করিয়া চিঠি বিলি হইয়া গেছে— আবার সেটা বন্ধ করিয়া ফের চিঠি লিখিতে হইবে ? যোগেন্দ্ৰ কহিল, “একেবারে বন্ধ করিবার দরকার কী— কিছু পরিবর্তন করিয়া কাজ চালাইয়া লওয়া যাইতে পারে।” ) অন্নদাবাবু আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, “ওর মধ্যে পরিবর্তন কোনখানটায় করিবে ?” যোগেন্দ্র । যেখানে পরিবর্তন করা সম্ভব সেইখানেই করিতে হইবে । রমেশের বদলে আর কোনো কাছে মুখ দেখাইতে পারিব না । বলিয়া যোগেন্দ্র একবার অক্ষয়ের মুখের দিকে চাহিল। অক্ষয় বিনয়ে মুখ নত করিল। অন্নদাবাবু। পাত্র এত শীঘ পাওয়া যাইবে ? যোগেন্দ্র । সে তুমি নিশ্চিন্ত থাকো । অন্নদাবাবু । কিন্তু হেমকে তো রাজি করাইতে হইবে । যোগেন্দ্র । রমেশের সমস্ত ব্যাপার শুনিলে সে নিশ্চয় রাজি হইবে । অন্নদাবাবু। তবে যা তুমি ভালো বিবেচনা হয় তাই করো। কিন্তু রমেশের বেশ সংগতিও ছিল, আবার উপার্জনের মতো বিদ্যাবুদ্ধিও ছিল। এই পরশু আমার সঙ্গে কথা ঠিক হইয়া গেল, সে এটােয়ায় গিয়া প্র্যাকটিস করিবে, এর মধ্যে দেখো দেখি কী কাণ্ড । যোগেন্দ্র । সেজন্য কেন চিন্তা করিতেছ। বাবা, এটোয়াতে রমেশ এখনো প্র্যাকটিস করিতে পরিবে । একবার হেমকে ডাকিয়া আনি, আর তো বেশি সময় নাই । কিছুক্ষণ পরে যোগেন্দ্ৰ হেমনলিনীকে লইয়া ঘরে প্রবেশ করিল। অক্ষয় ঘরের এক কোণে বইয়ের আলমারির আড়ালে বসিয়া রহিল । যোগেন্দ্ৰ কহিল, “হেম, বোসো, তোমার সঙ্গে একটু কথা আছে।” হেমনলিনী স্তব্ধ হইয়া চৌকিতে বসিল । সে জানিত তাহার একটা পরীক্ষা আসিতেছে। যোগেন্দ্ৰ ভূমিকাচ্ছলে জিজ্ঞাসা করিল, “রামেশের ব্যবহারে সন্দেহের কারণ তুমি কিছুই দেখিতে १९3 भी ?” হেমনলিনী কোনো কথা না বলিয়া কেবল ঘাড় নাড়িল । যোগেন্দ্র । সে যে বিবাহের দিন এক সপ্তাহ পিছাইয়া দিল, তাহার এমন কী কারণ থাকিতে পারে যাহা আমাদের কারও কাছে বলা চলে না ! হেমনলিনী চোখ নিচু করিয়া কহিল, “কারণ অবশ্যই কিছু আছে।” যোগেন্দ্র । সে তো ঠিক কথা । কারণ তো আছেই, কিন্তু সে কি সন্দেহজনক না ?