পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(नोकादि R?) পালাইয়া বেড়ানো আমার কাছে অত্যন্ত জঘন্য মনে হয়। জানি না হেম কী মনে করে, কিন্তু এইয়াপ পলায়নেই তাহার অপরাধের যথেষ্ট প্রমাণ হইতেছে।” হেমনলিনী কঁাপিতে কঁাপিতে চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া দাড়াইল ; কহিল, “দাদা, আমি প্রমাণের কোনো অপেক্ষ রাখি না । তোমরা তাহার বিচার করিতে চাও করো, আমি তাহার বিচারক নই।” যোগেন্দ্ৰ। তোমার সঙ্গে যাহার বিবাহের সম্বন্ধ হইতেছে সে কি আমাদের নিঃসম্পর্ক ? হেমনলিনী । বিবাহের কথা কে বলিতেছে ? তোমরা ভাঙিয়া দিতে চাও ভাঙিয়া দাও- সে তোমাদের ইচ্ছা । কিন্তু আমার মন ভাঙাইবার জন্য মিথ্যা চেষ্টা করিতেছি । অশ্রুসিক্তমুখ বুকে চাপিয়া ধরিয়া কহিলেন, “চলো হেম, আমরা উপরে যাই।” NR NS) স্টীমার ছাড়িয়া দিল ; প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরায় কেহই ছিল না। রমেশ একটি কামরা বাছিয়া লইয়া বিছানা পাতিয়া দিল। সকালবেলা দুধ খাইয়া সেই কামরার দরজা খুলিয়া কমলা নদী ও নদীতীর দেখিতে লাগিল । রমেশ কহিল, “জন কমলা, আমরা কোথায় যাইতেছি ?” কমলা কহিল, “দেশে যাইতেছি ।” রমেশ । দেশ তো তোমার ভালো লাগে না- আমরা দেশে যাইব না । কমলা । আমার জন্যে তুমি দেশে যাওয়া বন্ধ করিয়াছ ? রমেশ । ইয়া, তোমারই জন্যে । কমলা মুখ ভার করিয়া কহিল, “কেন তা করিলে ? আমি একদিন কথায় কথায় কী বলিয়ছিলাম, সেটা বুঝি এমন করিয়া মনে লইতে আছে ? তুমি কিন্তু ভারি অল্পেতেই রাগ কর।” রমেশ হাসিয়া কহিল, “আমি কিছুমাত্র রাগ করি নাই। দেশে যাইবার ইচ্ছা আমারও নাই ।” কমলা তখন উৎসুক হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “তবে আমরা কোথায় যাইতেছি ?” রমেশ । পশ্চিমে । ‘পশ্চিমে শুনিয়া কমলার চক্ষু বিস্ফারিত হইয়া উঠিল । পশ্চিম ! যে লোক চিরদিন ঘরের মধ্যে কাটাইয়াছে এক ‘পশ্চিম বলিতে তাহার কাছে কতখানি বোঝায় ! পশ্চিমে তীর্থ, পশ্চিমে স্বাস্থ্য, পশ্চিমে নব নব দেশ, নব নব দৃশ্য, কত রাজা ও সম্রাটের পুরাতন কীর্তি, কত কারুখচিত দেবালয়, কত প্ৰাচীন কাহিনী, কত বীরত্বের ইতিহাস ! কমলা পুলকিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “পশ্চিমে আমরা কোথায় যাইতেছি ?” রমেশ কহিল, “কিছুই ঠিক নাই। মুঙ্গের, পাটনা, দানাপুর, বকসার, গাজিপুর, কাশী, যেখানে হউক এক জায়গায় গিয়া উঠা যাইবে ।” এই সকল কতক-জােনা এবং না-জানা শহরের নাম শুনিয়া কমলার কল্পনাবৃত্তি আরো উত্তেজিত হইয়া উঠিল । সে হাততালি দিয়া কহিল, “ভারি মজা হইবে।” রমেশ কহিল, “মজা তো পরে হইবে, কিন্তু এ কয়দিন খাওয়া-দাওয়ার কী করা যাইবে ? তুমি খালাসিদের হাতের রান্না খাইতে পরিবে ?” কমলা ঘূণায় মুখ বিকৃত করিয়া কহিল, “মা গো ! সে আমি পারিব না।” রমেশ । তাহা হইলে কী উপায় করিবে ? কমলা । কেন, আমি নিজে রাধিয়া লইব । রমেশ । তুমি রাধিতে পাের ? কমলা হাসিয়া উঠিয়া কহিল, “তুমি আমাকে কী যে ভাব জানি না। রাধিতে পারি না তো কী ? ey