পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীেকাডবি Sፃ(፩ 的、 উমেশকেও লাইতে হইবে নাকি ?” কমলা কহিল, “না লইলে ও কোথায় যাইবে ?” রমেশ । কেন, কাশীতে ওর আত্মীয় আছে। কমলা। না, ও আমাদেরই সঙ্গে যাইবে বলিয়াছে। উমেশ, দেখিস, তুই খুড়ামশায়ের সঙ্গে সঙ্গে থাকিস, নহিলে বিদেশে ভিড়ের মধ্যে কোথায় হারাইয়া যাইবি । কোন দেশে যাইতে হইবে, কাহাকে সঙ্গে লইতে হইবে, এ-সমস্ত মীমাংসার ভার কমলা একলাই লইয়াছে। রমেশের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বন্ধন পূর্বে কমলা নম্রভাবে স্বীকার করিত, হঠাৎ এই শেষ কয়দিনের মধ্যে তাহা যেন সে কাটাইয়াৰ উঠিয়াছে। অতএব উমেশও তাহার ক্ষুদ্র একটি কাপড়ের পুঁটুলি কক্ষে লইয়া চলিল, এ সম্বন্ধে আর অধিক আলোচনা হইল না । শহর এবং সাহেবপাড়ার মাঝামাঝি একটা জায়গায় খুড়োমশায়ের একটি ছোটাে বাংলা । তাহার পশ্চাতে আমবাগান, সম্মুখে বাঁধানাে কৃপ, সামনের দিকে অনুচ্চ প্রাচীরের বেষ্টন— কৃপের সিঞ্চিত জলে কপি-কড়াইগুটির খেত শ্ৰীবৃদ্ধিলাভ করিয়াছে। প্রথম দিনে কমলা ও রমেশ এই বাংলাতে গিয়াই উঠিল। দীের্বল্যের বাহালক্ষণ কিছুই দেখিতে পাওয়া যায় না। তঁহার বয়স নিতান্ত অল্প নহে, কিন্তু শক্তসমর্থ চেহারা। সামনের কিছু কিছু চুল পাকিয়ছে, কিন্তু কঁাচার অংশই বেশি। র্তাহার সম্বন্ধে জরা যেন কেবলমাত্র ডিক্রি পাইয়াছে, কিন্তু দখল পাইতেছে না । আসল কথা, এই দম্পতিটি যখন তরুণ ছিলেন তখন হরিভাবিনীকে ম্যালেরিয়ায় খুব শক্ত করিয়া ধরে। বায়ুপরিবর্তন ছাড়া আর-কোনাে উপায় না দেখিয়া চক্রবর্তী গাজিপুর ইস্কুলের মাস্টারি জোগাড় করিয়া এখানে আসিয়া বাস করেন। স্ত্রী সম্পূর্ণ সূস্থ হইলেও তীহার স্বাস্থ্যের প্রতি চক্রবর্তীর কিছুমাত্র यश अनी नाई । অতিথিদিগকে বাহিরের ঘরে বসাইয়া চক্রবর্তী অন্তঃপুরে প্রবেশ করিয়া ডাকিলেন, “সেজোবউ !" সেজোবউ তখন প্রাচীরবেষ্টিত প্রাঙ্গণে রামকৌলিকে দিয়া গম ভাঙাইতেছিলেন এবং ছোটােবড়ো নানাপ্রকার ভীড়ে ও হাঁড়িতে নানাজাতীয় চাটনি রৌদ্রে সাজাইতেছিলেন। চক্রবর্তী আসিয়াই কহিলেন, “এই বুঝি ! ঠাণ্ডা পড়িয়াছে— গায়ে একখানা র্যাপার দিতে নাই ?” হরিভাবিনী। তোমার সকল অনাসৃষ্টি । ঠাণ্ডা আবার কোথায়— রৌদ্রে পিঠ পুড়িতেছে। চক্রবর্তী। সেটাই কি ভালো ? ছায়া জিনিসটা তো দুর্মুল্য নয়। হরিভাবিনী। আচ্ছা, সে হবে, তুমি আসিতে এত দেরি করিলে কেন ? চক্রবর্তী’। সে অনেক কথা । আপাতত ঘরে অতিথি উপস্থিত, সেবার আয়োজন করিতে হইবে । এই বলিয়া চক্রবর্তী অভ্যাগতদের পরিচয় দিলেন । চক্রবর্তীর ঘরে হঠাৎ এরূপ বিদেশী অতিথির সমাগম প্রায়ই ঘটিয়া থাকে, কিন্তু সস্ত্রীক অতিথির জন্য হরিভাবিনী প্ৰস্তুত ছিলেন না ; তিনি কহিলেন, "ওমা, তোমার এখানে ঘর কোথায় ?” চক্রবর্তী কহিলেন, “আগে তো পরিচয় হউক, তার পরে ঘরের কথা পরে হইবে । আমাদের শৈল কোথায় ?” f হরিভাবিনী । সে তাহার ছেলেকে স্নান করাষ্ট্রতেছে। চক্রবর্তী তাড়াতাড়ি কমলাকে অন্তঃপুরে ডাকিয়া আনিলেন। কমলা হরিভাবিনীকে প্ৰণাম করিয়া দীড়াইতেই তিনি দক্ষিণ করপুটে কমলার চিবুক স্পর্শ করিয়া নিজের অঙ্গুলি চুম্বন করিলেন এবং স্বামীকে কহিলেন, “দেখিয়াছ, মুখখানি অনেকটা আমাদের বিধুর মতো।” বিধু ইহাদের বড়ো মেয়ে, কানপুরে স্বামিংগৃহে থাকে। চক্রবর্তী মনে মনে হাসিলেন। তিনি জানিতেন। কমলার সহিত বিধুর কোনাে সাদৃশ্য নাই, কিন্তু হরিভাবিনী রূপগুণে বাহিরের মেয়ের জয়