পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sbrや রবীন্দ্র-রচনাবলী শৈল তাহার কোনো উত্তর না দিয়া একটুখানি হাসিয়া কমলার চিবুক ধরিয়া নাড়া দিল, এবং বাংলার মধ্যে প্রবেশ করিয়া তাহার পিতার ঘুম ভাঙাইয়া কহিল, “বাবা, আমি বাড়ি যাইতেছি। ” কমলাকে খুড়া কহিলেন, “মা, তুমিও চলো।” খুড়া তাহার পুরাতন চাকরকে ও উমেশকে কমলার কাছে রাখিয়া শৈলকে বাড়ি পৌঁছাইয়া দিতে গেলেন, সেখানে তাহার কিছু কাজ ছিল ; কহিলেন, “আমার ফিরিতে বেশি বিলম্ব হইবে না।” কমলা যখন তাহার ঘর-গোছানাের কাজ শেষ করিল। তখনো সূর্য অস্ত যায় নাই ! সে মাথায়-গায়ে একটা র্যাপার জড়াইয়া নিমগাছের তলায় আসিয়া বসিল । দূরে, ও পারে যেখানে বড়ো বড়ো গোটা-দুই-তিন নীেকার মাস্তুল অগ্নিবৰ্ণ আকাশের গায়ে কালো আঁচড় কাটিয়া দাড়াইয়া ছিল তাঁহারই পশ্চাতের উচু পাড়ির আড়ালে সূর্য নামিয়া গেল । এমন সময় উমেশটা একটা জুতা করিয়া তাহার কাছে আসিয়া দাড়াইল । কহিল, “মা, অনেকক্ষণ । তুমি পান খাও নাই— ও বাড়ি হইতে আসিবার সময় আমি পান জোগাড় করিয়া আনিয়াছি।” বলিয়া একটা কাগজে মোড়া কয়েকটা পান কমলার হাতে দিল । কমলার তখন চৈতন্য হইল সন্ধ্যা হইয়া আসিয়াছে। তাড়াতাড়ি উঠিয়া পড়িল ; উমেশ কহিল, কমলা গাড়িতে উঠিবার পূর্বে বাংলার মধ্যে ঘরগুলি আর-একবার দেখিয়া লইবার জন্য প্রবেশ করিল | বড়ো ঘরে শীতের সময় আগুন জ্বলিবার জন্য বিলাতি ছাদের একটি চুল্লি ছিলু। তাঁহারই সংলগ্ন থাকের উপরে কেরোসিনের আলো জ্বলিতেছিল। সেই থাকের উপর কমলা পানের মোড়ক রাখিয়া কী একটা পর্যবেক্ষণ করিতে যাইতেছিল। এমন সময় হঠাৎ কাগজের মোড়কে রমেশের হস্তাক্ষরে তাহার নিজের নাম কমলার চোখে পড়িল । উমেশকে কমলা জিজ্ঞাসা করিল, “এ কাগজ তুই কোথায় পেলি ?” কমলা সেই কাগজখানা মেলিয়া ধরিয়া পড়িতে লাগিল । হেমনলিনীকে রমেশ সেদিন যে বিস্তারিত চিঠি লিখিয়াছিল এটা সেই চিঠি । স্বভাবশিথিল রমেশের হাত হইতে কখন সেটা কোথায় পড়িয়া গড়াইতেছিল, তাহা তাহার ইশ ছিল না। কমলার পড়া হইয়া গেল। উমেশ কহিল, “মা, অমন করিয়া চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিলে যে ! রাত হইয়া যাইতেছে।” ঘর নিস্তব্ধ হইয়া রহিল। কমলার মুখের দিকে চাহিয়া উমেশ ভীত হইয়া উঠিল । কহিল, “মা, আমার কথা শুনিতেছ। মা ? ঘয়ে চলো, রাত হইল।” কিছুক্ষণ পরে খুড়ার চাকর আসিয়া কহিল, “মায়ীজি, গাড়ি অনেকক্ষণ দাড়াইয়া আছে। চালাে আমরা যাই ।” WDV শৈলজা জিজ্ঞাসা করিল, “ভাই, আজ কি তোমার শরীর ভালো নাই ? মাথা ধরিয়াছে ?” কমল কহিল, “না। খুড়ামশায়কে দেখিতেছি না কেন ?” শৈল কহিল, “ইস্কুলে ঘড়েদিনের ছুটি আছে, দিদিকে দেখিবার জন্য মা তঁহাকে এলাহাবাদে পঠাইয়া দিয়াছেন— কিছুদিন হইতে দিদির শরীর ভালো নাই।” কমলা কহিল, “তিনি কৰে ফিরিবেন ?” শৈল। তার ফিরিতে অন্তত হস্তা-খানেক দেরি হইবার কথা। তোমাদের বাংলা সাজানো লইয়া তুমি সমস্ত দিন বড়ো বেশি পরিশ্রম কর, আজ তোমাকে বড়ো খারাপ দেখা যাইতেছে। আজ সকাল