পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨છે રે রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী শৈল আশ্চর্য হইয়া কহিল, “পাগল নাকি !” * কমলা কহিল, “আমার মাথা খাও দিদি, এ ব্রেসলেট-জোড়া তুমি আমাকে ফিরাইতে পরিবে না ইহা ভাঙিয়া উমির হার গড়াইয়া দিয়ো ।” শৈল কহিল, “না, সত্য বলিতেছি, তোর মতো খেপা মেয়ে আমি দেখি নাই।” এই বলিয়া কমলার গলা জড়াইয়া ধরিল । কমলা কহিল, “তোদের এখান হইতে আমি তো আজ চলিলাম দিদি- খুব সুখে ছিলাম— এমন সুখ আমার জীবনে কখনো পাই নাই।” বলিতে বলিতে ঝর ঝর করিয়া তাহার চোখের জল পড়িতে লাগিল । শৈলও উদগত অশ্রু দমন করিয়া বলিল, “তোর রকমটা কী বল দেখি কমল, যেন কত দূরেই যাইতেছিস ! যে সুখে ছিলি সে আর আমার বুঝিতে বাকি নাই। এখন তোর সব বাধা দূর হইল, সুখে আপন ঘরে একলা রাজত্ব করিবি— আমরা কখনো গিয়া পড়িলে ভাবিবি, আপদ বিদায় হইলেই टैं5ि |” *። বিদায়কালে কমলা শৈলকে প্ৰণাম করিলে পর শৈল কহিল, “কাল দুপুরবেলা আমি তোদের ওখানে যাইব ।” কমলা তাহার উত্তরে হী-না কিছুই বলিল না। বাংলায় গিয়া কমলা দেখিল, উমেশ আসিয়াছে। কমলা কহিল, “তুই যে ! যাত্রা শুনিতে যাবি का ?” উমেশ কহিল, “তুমি যে আজ এখানে থাকিবে, আমি—” । কমলা। আচ্ছা আচ্ছা, সে তোর ভাবিতে হইবে না। তুই যাত্রা শুনিতে যা, এখানে বিষণ আছে। যা, দেরি করিস নে ৷” উমেশ । এখনো তো যাত্রার অনেক দেরি । কমলা | তা হােক-না, বিয়েবাড়িতে কত ধুম হইতেছে, ভালো করিয়া দেখিয়া আয় গে যা। এ সম্বন্ধে উমেশকে অধিক উৎসাহিত করিবার প্রয়োজন ছিল না । সে চলিয়া যাইতে উদ্যত হইলে কমলা হঠাৎ তাহাকে ডাকিয়া কহিল, “দেখ, খুড়োমশায় আসিলে তুই—” এইটুকু বলিয়া কথাটা কী করিয়া শেষ করিতে হইবে ভাবিয়া পাইল না। উমেশ হী করিয়া দাড়াইয়া রহিল। কমলা খানিকক্ষণ ভাবিয়া কহিল, “মনে রাখিস, খুড়োমশায় তোকে ভালোবাসেন, তোর যখন যা দরকার হইবে, আমার প্রণাম জানাইয়া তুই তীর কাছে চাস, তিনি দিবেন-- তাকে আমার প্রণাম দিতে কখনো ভুলিস নে— জনিস ?” উমেশ এই অনুশাসনের কোনো অর্থ না বুঝিয়া “যে আজ্ঞে” বলিয়া চলিয়া গেল । অপরাহুে বিষণ জিজ্ঞাসা করিল, “মাজি, কোথায় যাইতেছ?” কমলা কহিল, “গঙ্গায় স্নান করিতে চলিয়াছি।” বিষণ কহিল, “সঙ্গে যাইব ?” । কমলা কহিল, “না, তুই ঘরে পাহারা দে।” বলিয়া তাহার হাতে অনাবশ্যক একটা টাকা দিয়া কমলা গঙ্গার দিকে চলিয়া গেল। \Obr একদিন অপরাহুে হেমনলিনীর সহিত একত্রে নিভৃতে চা খাইবার প্রত্যাশায় অন্নদাবাবু তাহাকে সন্ধান করিবার জন্য দোতলায় আসিলেন ; দোতলায় বসিবার ঘরে তাহাকে খুঁজিয়া পাইলেন না, শুইবার ঘরেও সে নাই। বেহারাকে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলেন, হেমনলিনী বাহিরে কোথাও যায় নাই। তখন অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত হইয়া অন্নদা ছাদের উপরে উঠিলেন। তখন কলিকাতা শহরের নানা আকার ও আয়তনের বহুদূরবিস্তৃত ছাদগুলির উপরে হেমন্তের অবসন্ন রৌদ্র স্নান হইয়া আসিয়াছে, দিনান্তের লঘু হাওয়াটি থাকিয়া থাকিয়া যেমন-ইচ্ছা ঘুরিয়া ফিরিয়া