পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○のやり রবীন্দ্র-রচনাবলী উহার স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করিয়া দিতে পারিতাম। আসলে স্বাস্থ্যরক্ষার গুটিকতক সহজ নিয়ম আছে। তাহার মধ্যে প্রথম হচ্ছে-” যোগেন্দ্ৰ অধৈৰ্য হইয়া কহিল, “বাবা, বৃথা কেন তোমরা ভাবিয়া মরিতেছ ? নলিনাক্ষবাবুর শরী তো দিব্য দেখিলাম ; তঁহাকে দেখিয়া আজ আমার বেশ বোধ হইল, সাধুত্ব-জিনিসটা স্বাস্থ্যকর। আমার নিজেরই মনে হইতেছে, ওটা চেষ্টা করিয়া দেখিলে হয়।” অন্নদা কহিলেন, “না যোগেন্দ্ৰ, অক্ষয় যাহা বলিতেছে তাহা হইতেও পারে। আমাদের দেশে বড়ো বড়ো লোকেরা প্রায় অল্প বয়সেই মারা যান, ইহারা নিজের শরীরকে উপেক্ষা করিয়া দেশের লোকসান করিয়া থাকেন। এটা কিছুতে ঘটিতে দেওয়া উচিত নয়। যোগেন্দ্র, তুমি নলিনাক্ষবাবুকে যাহা মনে করিতেছ। তাহা নয়, উহার মধ্যে আসল জিনিস আছে। উহাকে এখন হইতেই সাবধান করিয়া দেওয়া দরকার ।” । অক্ষয় । আমি উহাকে আপনার কাছে আনিয়া উপস্থিত করিব। আপনি যদি উহাকে একটু ভালো করিয়া বুঝাইয়া দেন তো ভালো হয়। আর, আমার মনে হয়, আপনি সেই- যে শিকড়ের রসটা আমাকে পরীক্ষার সময় দিয়াছিলেন সেটা আশ্চর্য বলকারক । যে-কোনো লোক সর্বদা মনকে খাটাইতেছে তাহার পক্ষে এমন মহীেষধ আর নাই। আপনি যদি একবার নলিনাক্ষবাবুকে যোগেন্দ্ৰ একেবারে চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া পড়িয়া কহিল, “আঃ অক্ষয়, তুমি জ্বালাইলে । বড়ো বাড়াবাড়ি করিতেছ। আমি চলিলাম।” 8Q পূর্বে যখন র্তাহার শরীর ভালো ছিল তখন অন্নদাবাবু ডাক্তারি ও কবিরাজি নানাপ্রকার বটিকাদি সর্বদাই ব্যবহার করিতেন— এখন আর ওষুধ খাইবারও উৎসাহ নাই এবং নিজের অস্বাস্থ্য লইয়া আজকাল তিনি আর আলোচনামাত্রও করেন না, বরঞ্চ তাহা গোপন করিতেই চেষ্টা করেন। আজ তিনি যখন অসময়ে কেদারায় ঘুমাইতেছিলেন তখন সিঁড়িতে পদশব্দ শুনিয়া হেমনলিনী কোল হইতে সেলাইয়ের সামগ্ৰী নামাইয়া তাহার দাদাকে সতর্ক করিয়া দিবার জন্য দ্বারের কাছে গেল। গিয়া দেখিল, তাহার দাদার সঙ্গে সঙ্গে নলিনাক্ষবাবু আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন । তাড়াতাড়ি অন্য ঘরে পালাইবার উপক্ৰম করিতেই যোগেন্দ্র তাহাকে ডাকিয়া কহিল, “হেম, নলিনাক্ষবাবু হেম থমকিয়া দাড়াইল এবং নলিনাক্ষ তাহার সম্মুখে আসিতেই তাহার মুখের দিকে না চাহিয়া নমস্কার করিল। অন্নদাবাবু জাগিয়া উঠিয়া ডাকিলেন, “হেম ||” হেম তাহার কাছে আসিয়া মৃদুস্বরে কহিল, “নলিনাক্ষবাবু আসিয়াছেন।” যোগেন্দ্রের সহিত নলিনাক্ষ ঘরে প্রবেশ করিতেই অন্নদাবাবু ব্যস্তভাবে অগ্রসর হইয়া নলিনাক্ষকে অভ্যর্থনা করিয়া আনিলেন । কহিলেন, “আজ আমার বড়ো সৌভাগ্য, আপনি আমার বাড়িতে আসিয়াছেন। হেম, কোথায় যাইতেছ। মা, এইখানে বোসো। নলিনাক্ষবাবু, এটি আমার কন্যা হেমআমরা দুজনেই সেদিন আপনার বক্তৃতা শুনিতে গিয়া বড়ো আনন্দলাভ করিয়া আসিয়াছি। আপনি ঐ-যে একটি কথা বলিয়াছেন- আমরা যাহা পাইয়াছি তাহা কখনোই হারাইতে পারি না, যাহা যথার্থ পাই নাই তাহাই হারাই, এ কথাটির অর্থ বড়ো গভীর। কী বলে মা হেম ? বাস্তবিক, কোন জিনিসটিকে যে আমার করিতে পারিয়াছি আর কোনটিকে পারি নাই তাহার পরীক্ষা হয় তখনই যখনই তাহা আমাদের হাতের কােছ হইতে সরিয়া যায়। নলিনাক্ষবাবু, আপনার কাছে আমাদের একটি অনুরোধ আছে। মাঝে মাঝে আপনি আসিয়া যদি আমাদের সঙ্গে আলোচনা করিয়া যান। তবে আমাদের বড়ো উপকার হয় । আমরা বড়ো কোথাও বাহির হই না- আপনি যখনই আসিবেন। আমাকে আর আমার মেয়েটিকে এই ঘরেই দেখিতে পাইবেন ।” নলিনাক্ষ আলজ্জিত হেমনলিনীর মুখের দিকে একবার চাহিয়া কহিল, “আমি বক্তৃতাসভায় বড়ো