পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VOYV अीक्ष-शष्नावली আসিল- কেহই সাড়া দিল না। খুঁজতে খুঁজতে উমেশ হঠাৎ দূরে সাদা কী একটা দেখিতে পাইল। তাড়াতাড়ি কাছে আসিয়া দেখিল, জলের একেবারে ধারেই এক গোছা চাবি একটা রুমালে বাধা পড়িয়া আছে। “কি রে, ওটা কী ?” বলিয়া রমেশও আসিয়া পড়িল। দেখিল, কমলারই চাবির গোছা । যেখানে চাবি পড়িয়াছিল। সেখানে বালুতটের প্রান্তভাগে পলিমাটি পড়িয়ছে। সেই কঁচা মাটি উপর দিয়া গঙ্গার জল পর্যন্ত ছােটাে দুইটি পায়ের গভীর চিহ্ন পড়িয়া গেছে। খানিকটা জলের মধ্যে একটা কী বিক ঝিকা করিতেছিল, তাহা উমেশের দৃষ্টি এড়াইতে পারিল না ; সে সেটা তাড়াতাড়ি তুলিয়া ধরিতেই দেখা গেল, সোনার উপরে এনামেল-করা একটি ছােটাে ব্রোচ— ইহা রমেশেরই উপহার । এইরূপে সমস্ত সংকেতই যখন গঙ্গার জলের দিকেই অঙ্গুলিনির্দেশ করিল। তখন উমেশ আর থাকিতে পারিল না- “মা, মা গো” বলিয়া চীৎকার করিয়া জলের মধ্যে বঁপ দিয়া পডিল । জল সেখানে অধিক ছিল না; উমেশ বারংবার পাগলের মতো ডুব দিয়া তলা হাতড়াইয়া বেড়াইতে লাগিল, জল ঘোলা করিয়া তুলিল । রমেশ হতবুদ্ধির মতো দাড়াইয়া রহিল। বিপিন কহিল, “উমেশ, তুই কী করিতেছিস ? উঠিয় আয় ।” উমেশ মুখ দিয়া জল ফেলিতে ফেলিতে বলিতে লাগিল, “আমি উঠিব না, আমি উঠিব না। মা গো, তুমি আমাকে ফেলিয়া যাইতে পরিবে না।” বিপিন ভীত হইয়া উঠিল । কিন্তু উমেশ জলের মাছের মতো সাতার দিতে পারে, তাহার পক্ষে জলে আত্মহত্যা করা অত্যন্ত কঠিন । সে অনেকটা হাঁপাইয়া-ঝাপাইয়া শ্ৰান্ত হইয়া ডাঙায় উঠিয়া পড়িল এবং বালুর উপরে লুটাইয়া পড়িয়া কঁদিতে লাগিল । বিপিন নিস্তব্ধ রমেশকে স্পর্শ করিয়া কহিল, “রমেশবাবু, চলুন। এখানে দাড়াইয়া থাকিয়া কী হইবে !! একবার পুলিসকে খবর দেওয়া যাক, তাহারা সমস্ত সন্ধান করিয়া দেখুক ।” শৈলজার ঘরে সেদিন আহারনিদ্রা বন্ধ হইয়া কান্নার রোল উঠিল । নদীতে জেলেরা নীেকা লইয়া অনেক দূর পর্যন্ত জাল টানিয়া বেড়াইল । পুলিস চারি দিকে সন্ধান করিতে লাগিল। স্টেশনে গিয়া বিশেষ করিয়া খবর লইল, কমলার সহিত বর্ণনায় মেলে এমন কোনো বাঙালির মেয়ে রাত্রে (द्रव्ला7िऊ ७ळे माझे | সেই দিনই বিকালে খুড়া আসিয়া পৌঁছিলেন। কয়দিন হইতে কমলার ব্যবহার ও আদ্যোপােন্ত সুন্ধান্ত শুনিয়া স্থার সঙ্গেমাত্র বলি না যে, কমলা গঙ্গার জলে ডুবিয়া আত্মহত্যা করিয়া লছমনিয়া কহিল, “সেইজন্যই খুকি। কাল রাত্রে অকারণে কান্না জুড়িয়া এমন একটা অদ্ভূত কাণ্ড করিল, উহাকে ভালো করিয়া ঝাড়াইয়া লওয়া দরকার ।” রমেশের বুকের ভিতরটা যেন শুকাইয়া গেল ; তাহার মধ্যে অশ্রুর বাস্পটুকুও ছিল না । সে বসিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিল- 'একদিন এই কমলা এই গঙ্গার জল হইতে উঠিয়া আমার পাশে আসিয়াছিল, আবার পূজার পবিত্র ফুলটুকুর মতো আর-এক দিন এই গঙ্গার জলের মধ্যেই অন্তৰ্হিত शैब्ल ।।' সূর্য যখন অস্ত গেল তখন রমেশ আবার সেই গঙ্গার ধারে আসিল ; যেখানে চাবির গোছা পড়িয়া ছিল সেখানে দাড়াইয়া সেই পায়ের চিহ্ন ক'টি একদৃষ্টি দেখিল ; তাহার পরে তীরে জুতা খুলিয়া, ধুতি গুটািইয়া লইয়া, খানিকটা জল পর্যন্ত নামিয়া গেল এবং বাক্স হইতে সেই নুতন নেকলেসটি বাহির করিয়া দূরে জলের মধ্যে ষ্টুড়িয়া ফেলিল । t রমেশ কখন যে গাজিপুর হইতে চলিয়া গেল, খুড়ার বাড়িতে তাহার খবর লইবার মতো অবই কাহারও রহিল না ।