পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(नोकोट्रति VVG কর্তা অবিচলিত গন্তীরস্বরে কহিলেন, “পুলিসে খবর দেওয়া যাক ৷” r একজন চাকর লণ্ঠন লইয়া পথে বাহির হইল। ইতিমধ্যে কমলা তাহার ঘরে ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, নবীনকালী সে ঘরে সমস্ত জিনিসপত্র তন্ন-তন্ন করিয়া দেখিতেছেন। কোনো জিনিস চুরি গেছে কি না তাঁহাই তিনি সন্ধান করিতে প্ৰবৃত্ত হইয়াছেন। এমন সময় কমলাকে হঠাৎ দেখিয়া নবীনকালী বলিয়া উঠিলেন, “বলি, কী কাণ্ডটাই করিলে ? কোথায় যাওয়া হইয়াছিল ?” কমলা কহিল, “কাজ শেষ করিয়া আমি একটুখানি বাগানে বেড়াইতেছিলাম।” নবীনকালী মুখে যাহা আসিল তাঁহাই বলিয়া গেলেন। বাড়ির সমস্ত চাকর-বাকর দরজার কাছে আসিয়া জড়ো হইল । কমলা কোনোদিন নবীনকালীর কোনো ভংসনীয় তাহার সম্মুখে অশ্রুবর্ষণ করে নাই। আজও সে কাঠের মূর্তির মতো স্তব্ধ হইয়া দাড়াইয়া রহিল। নবীনকালীর বাক্যবর্ষণ একটুখানি ক্ষান্ত হইবামাত্র কমলা কহিল, “আমার প্রতি আপনারা অসন্তুষ্ট হইয়াছেন, আমাকে বিদায় করিয়া দিন ।” নবীনকালী। বিদায় তো করিবই। তোমার মতো অকৃতজ্ঞকে চিরদিন ভাত-কাপড় দিয়া পুষিব, এমন কথা মনেও করিয়ো না । কিন্তু কেমন লোকের হাতে পড়িয়াছ সেটা আগে ভালো করিয়া জানাইয়া। তবে বিদায় দিব । Կ ইহার পর হইতে কমলা বাহিরে যাইতে আর সাহস করিত না । সে ঘরের মধ্যে দ্বার রুদ্ধ করিয়া মনে মনে এই কথা বলিল, যে লোক এত দুঃখ সহ্য করিতেছে ভগবান নিশ্চয় তাহার একটা গতি করিয়া দিবেন। মুকুন্দবাবু তাহার দুইটি চাকর সঙ্গে লইয়া গাড়ি করিয়া হাওয়া খাইতে বাহির হইয়াছেন। বাড়িতে প্রবেশের দরজায় ভিতর হইতে হুড়ক বন্ধ । সন্ধ্যা হইয়া আসিয়াছে। দ্বারের কাছে রব উঠিল, “মুকুন্দবাবু ঘরে আছেন কি ?” শ্ৰেষ্ঠ কিন্তু ইয়া কের উঠলে ঐ গো, নলিনাক্ষ ডাক্তার আসিয়াছেন। বুধিয়া, & " ধয়া-নামধারিণীর কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। তখন নবীনকালী কহিলেন, “বামুন-ঠাকরুন, যাও তো, শীঘ্র দরজা খুলিয়া দাও গে। ডাক্তারবাবুকে বলো, কর্তা হাওয়া খাইতে বাহির হইয়াছেন, এখনি আসিবেন ; একটু অপেক্ষা করিতে হইবে।” কমলা লণ্ঠন লইয়া নীচে নামিয়া গেল— তাহার পা কঁাপিতেছে, তাহার বুকের ভিতর গুর গুরু করিতেছে, তাহার করতল ঠাণ্ডা হিম হইয়া গেল। তাহার ভয় হইতে লাগিল, পাছে এই বিষম ব্যাকুলতায় সে চোখে ভালো করিয়া দেখিতে না পায় । কমলা ভিতর হইতে হুড়কা খুলিয়া দিয়া ঘোমটা টানিয়া কপাটের অন্তরালে দাড়াইল । নলিনাক্ষ জিজ্ঞাসা করিল, “কর্তা ঘরে আছেন কি ?” কমলা কোনোমতে কহিল, “না, আপনি আসুন ।” নলিনাক্ষ বসিবার ঘরে আসিয়া বসিল। ইতিমধ্যে বুধিয়া আসিয়া কহিল, “কর্তবাবু বেড়াইতে গৈছেন এখনি আসিবেন, আপনি একটু বসুন।” কমলার নিশ্বাস প্রবল হইয় তাহার বুকের মধ্যে কষ্ট হইতেছিল। যেখান হইতে নলিনাক্ষকে স্পষ্ট দেখা যাইবে, অন্ধকার বারান্দার এমন একটা জায়গা সে আশ্রয় করিল, কিন্তু দাড়াইতে পারিল না। বিক্ষুব্ধ বক্ষকে শান্ত করিবার জন্য তাঁহাকে সেইখানে বসিয়া পড়িতে হইল। তাহার হৃৎপিণ্ডের চাঞ্চল্যের সঙ্গে শীতের হাওয়া যোগ দিয়া তাহাকে থারথার করিয়া কঁপাইয়া তুলিল । নলিনাক্ষ কেরোসিন-আলোর পাশে বসিয়া স্তব্ধ হইয়া কী ভাবিতেছিল। অন্ধকারের ভিতর হইতে বেপথুমতী কমলা নলিনাক্ষের মুখের দিকে একদৃষ্টি চাহিয়া রহিল। চাহিতে চাহিতে তাহার দুই চক্ষে