পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীেকাডুবি లిuలి আমাকে কিছু কাবু করে। কাল সকালের গাড়িতে আমি বিদায় হইব, পথে বঁকিপূরে আমার কাজ আছে । অন্নদাবাবু চুপ করিয়া বসিয়া নিজের মাথায় হাত বুলাইতে লাগিলেন। সংসারের সমস্যা আবার দুরূহ হইয়া আসিয়াছে। \O শৈলজা এবং তাহার পিতা নলিনাক্ষের বাড়িতে আসিয়াছেন। শৈলজা কমলাকে লইয়া একটা কোণের ঘরে বসিয়া ফিসফিস করিতেছিল, চক্রবর্তী ক্ষেমংকরীর সঙ্গে আলাপ করিতেছিলেন। চক্ৰবতী । আমার তো ছুটি ফুরাইয়া আসিল, কালই গাজিপুরে যাইতে হইবে। যদি হরিদাসী আপনাদের কোনোরকমে বিরক্ত করিয়া থাকে, বা যদি আপনাদের পক্ষে ক্ষেমংকরী । ও আবার কী রকম কথা চক্রবতী মশায় ? আপনার মনের ভাবটা কী শুনি । আপনি কি কোনো ছুতা করিয়া আপনাদের মেয়েটিকে ফিরাইয়া লইতে চান ? চক্রবতী । আমাকে তেমন লোক পান নাই। আমি দিয়া ফিরাইয়া লইবার পাত্র নই, কিন্তু যদি ৷ আপনার কিছুমাত্র অসুবিধা হয়— ক্ষেমংকৰী । চক্রবর্তমশায়, ওটা আপনার সরল কথা নয়- মনে মনে বেশ জানেন, হরিদাসীর মতো অমন লক্ষ্মী মেয়েটিকে কাছে রাখিলে সুবিধার সীমা নাই, তবু চক্রবতী । না না, আর বলিতে হইবে না, আমি ধরা পড়িয়া গেছি। ওটা একটা ছলমাত্ৰ- আপনার মুখে হরিদাসীর গুণ শুনিবার জন্যই কথাটা আমার পাড়া। কিন্তু একটা ভাবনা আছে- পাছে নলিনাক্ষবাবু মনে করেন যে, এ আবার একটা উপসর্গ কোথা হইতে ঘাড়ে পড়িল। আমাদের মেয়েটি অভিমানী, যদি নলিনাক্ষের লেশমাত্র বি ব্যক্তিভাবও দেখিতে পায় তবে উহার পক্ষে বড়ো কঠিন হইবে । ক্ষেমংকরী । হরি বলো ! নলিনের আবার বিরক্তি ! ওর সে ক্ষমতাই নাই । চক্রবতী । সে কথা ঠিক । কিন্তু দেখুন, হরিদাসীকে আমি নাকি প্রাণের চেয়ে ভালোবাসি, তাই তার সম্বন্ধে আমি অল্পে সন্তুষ্ট হইতে পারি না । নলিনাক্ষ যে ওর 'পরে বিরক্ত হইবেন না, উদাসীনের মতো থাকিবেন, এইটুকুই আমার পক্ষে যথেষ্ট মনে হয় না । তার বাড়িতে যখন হরিদাসী আছে তখন তাকে তিনি আপনার লোক বলিয়া স্নেহ করবেন, এ ন হইলে মনে বড়ো সংকোচ বোধ হয়। ও তো ঘরের দেয়াল নয়, ও একটা মানুষ- ওর প্রতি বিরক্তও হইবেন না, স্নেহও করবেন না, ও আছে তো আছে, এইটুকুমাত্র সম্বন্ধ, সেটা যেন কেমন ক্ষেমংকরী । চক্রবর্তমশায়, আপনি বেশি ভাবিবেন না- কোনো লোককে আপনার লোক বলিয়া স্নেহ করা আমার নলিনের পক্ষে শক্ত নয়। বাহির হইতে কিছুই বুঝিবার জো নাই, কিন্তু এই-যে হরিদাসী আমার এখানে আছে, ও কিসে স্বচ্ছন্দে থাকে, ওর কিসে ভালো হয়, সে চিন্তা নিশ্চয়ই নলিনের মনে লাগিয়া আছে, খুব সম্ভব, সেরকম ব্যবস্থাও সে কিছু-না-কিছু করিতেছে, আমরা তাহা জানিতেও পারিতেছি না। চক্রবর্তী । শুনিয়া বড়ো নিশ্চিন্ত হইলাম। তবু আমি যাইবার আগে একবার বিশেষ করিয়া নলিনাক্ষবাবুকে বলিয়া যাইতে চাই। একটি স্ত্রীলোকের সম্পূর্ণ ভার লইতে পারে, এমন পুরুষ জগতে অল্পই মেলে ; ভগবান যখন নলিনাক্ষবাবুকে সেই যথার্থ পীেরুষ দিয়াছেন তখন তিনি যেন মিথ্যা *kকোচে হরিদাসীকে তফাতে রাখিয়া না চলেন, তিনি যেন যথার্থ আত্মীয়ের মতো তাহাকে নিতান্ত *হজভাবে গ্রহণ ও রক্ষা করেন, তাহার কাছে এই প্রার্থনাটি জানাইতে চাই। নলিনাক্ষের প্রতি চক্রবতীর এই বিশ্বাস দেখিয়া ক্ষেমংকরীর মন গলিয়া গেল। তিনি কহিলেন, পাছে আপনারী কিছু মনে করেন এই ভয়েই হরিদাসীকে আমি নলিনাক্ষের সামনে তেমন করিয়া ७||९8