পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডবি \O\O a কেশ সরাইয়া দিয়া ঘর হইতে চলিয়া গেল । কমলা তাহার পূজা এখনো শেষ করিতে পারিল না— তাহার পরিপূর্ণ হৃদয়ের ধারা এখনো সে ঢালিতে চায়, তাই সে নলিনাক্ষের শোবার ঘরে গিয়া আপনার গলার মালা দিয়া সেই খড়ম-জোড়াকে জড়াইল এবং তাহা আপনার মাথায় ঠেকাইয়া যত্নপূর্বক যথাস্থানে তুলিয়া রাখিল । তার পরে সমস্ত দিন তাহার গৃহকর্ম যেন দেবসেবার মতো মনে হইতে লাগিল। প্রত্যেক কৰ্মই যেন আকাশে এক-একটি আনন্দের তরঙ্গের মতো উঠিল পড়িল । ক্ষেমংকরী তাহাকে কহিলেন, “মা, তুমি করিতেছ। কী ? এক দিনে সমস্ত বাড়িটাকে ধুইয়া মজিয়া মুছিয়া একেবারে নূতন করিয়া তুলিবে নাকি ?” বৈকালের অবকাশের সময় আজ আর সেলাই না করিয়া কমলা তাহার ঘরের মেজের উপরে স্থির হইয়া বসিয়া আছে, এমন সময় নলিনাক্ষ একটি টুকরিতে গুটিকয়েক স্থলপদ্ম লইয়া ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল ; কহিল, “কমলা, এই ফুল-ক'টি তুমি জল দিয়া তাজা করিয়া রাখাে, আজ সন্ধ্যার পর আমরা দুজনে মাকে প্ৰণাম করিতে যাইব ।” কমলা মুখ নত করিয়া কহিল, “কিন্তু আমার সব কথা তো শোন নাই।” নলিনাক্ষ কহিল, “তোমাকে কিছু বলিতে হইবে না, আমি সব জানি ।” কমলা দক্ষিণ করতল দিয়া মুখ ঢাকিয়া কহিল, “মা কি—” বলিয়া কথা শেষ করিতে পারিল না । নলিনাক্ষ তাহার মুখ হইতে হাত নামাইয়া ধরিয়া কহিল, “মা তাহার জীবনে অনেক অপরাধকে ক্ষমা করিয়া আসিয়াছেন, যাহা অপরাধ নহে। তাহাকে তিনি ক্ষমা করিতে পরিবেন ।”