পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Visby রবীন্দ্র-রচনাবলী কৃষ্ণদয়াল তুমি তাকে জানলে কী করে ? গোরা । বিনয় তার বাড়ির কাছেই থাকে, তার কাছে তাদের গল্প শুনেছি। কৃষ্ণদয়াল। আমি ইচ্ছা করি তুমি তাদের খবর নিয়ে এসে । গোরা আপন মনে একটু চিন্তা করিল, তার পরে হঠাৎ বলিল, “আচ্ছা, আমি কালই যাব।" আনন্দময়ী কিছু আশ্চর্য হইলেন। গোরা একটু ভাবিয়া আবার কহিল, “না, কাল তো আমার যাওয়া হবে না।” কৃষ্ণদয়াল। কেন ? গোরা । কাল আমাকে ত্ৰিবেণী যেতে হবে । কৃষ্ণদয়াল আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, “ত্রিবেণী !” গোরা। কাল সূর্যগ্রহণের স্নান। •ክ আনন্দময়ী। তুই অবাক করলি গোরা ! স্নান করতে চাস কলকাতার গঙ্গা আছে। ত্ৰিবেণী না হলে তোর স্নান হবে না— তুই যে দেশসুদ্ধ সকল লোককে ছাড়িয়ে উঠলি | গোরা তাহার কোনো উত্তর না করিয়া চলিয়া গেল । গোরা যে ত্ৰিবেণীতে স্নান করিতে সংকল্প করিয়াছে তাহার কারণ এই যে, সেখানে অনেক তীর্থযাত্রী একত্র হইবে । সেই জনসাধারণের সঙ্গে গোরা নিজেকে এক করিয়া মিলাইয়া দেশের একটি বৃহৎ প্রবাহের মধ্যে আপনাকে সমর্পণ করিতে ও দেশের হৃদয়ের আন্দােলনকে আপনার হৃদয়ের মধ্যে অনুভব করিতে চায়। যেখানে গোরা একটুমাত্র অবকাশ পায় সেখানেই সে তাহার সমস্ত সংকোচ, সমস্ত পূর্বসংস্কার সবলে পরিত্যাগ করিয়া দেশের সাধারণের সঙ্গে সমান ক্ষেত্রে নামিয়া দাড়াইয়া মনের a ভোরে উঠিয়া বিনয় দেখিল রাত্রির মধ্যেই আকাশ পরিষ্কার হইয়া গেছে। সকালবেলাকার আলোটি দুধের ছেলের হাসির মতো নির্মল হইয়া ফুটিয়াছে। দুই-একটা সাদা মেঘ নিতান্তই বিনা প্রয়োজনে আকাশে ভাসিয়া বেড়াইতেছে। বারান্দায় দাড়াইয়া আর-একটি নির্মল প্ৰভাতের স্মৃতিতে যখন সে পুলকিত হইয়া উঠিতেছিল এমন সময় দেখিল পরেশ এক হাতে লাঠি ও অন্য হাতে সতীশের হাত ধরিয়া রাস্তা দিয়া ধীরে ধীরে চলিয়াছেন। সতীশ বিনয়কে বারান্দায় দেখিতে পাইয়াই হাততালি দিয়া “বিনয়বাবু” বলিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল। পরেশও মুখ তুলিয়া চাহিয়া বিনয়কে দেখিতে পাইলেন। বিনয় তাড়াতাড়ি নীচে যেমন নামিয়া আসিল, সতীশকে লইয়া পরেশও তাহার বাসার মধ্যে প্রবেশ করিলেন । বিনয় সস্নেহে সতীশের পিঠে হাত দিয়া হাসিতে লাগিল। পরেশ সাবধানে ঠাহার লাঠিগাছটি টেবিলের গায়ে ঠেস দিয়া দাড় করাইয়া চৌকিতে বসিলেন ও কহিলেন, “সেদিন আপনি না থাকলে