পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 8o> গল্প করিতে করিতে একে একে পরেশ আজ বিনয়ের সমস্ত খবর জানিতে পারিলেন । বিনয়ের বাপ-মা নাই ; খুড়িমাকে লইয়া খুড়া দেশে থাকিয়া বিষয়কর্ম দেখেন। তাহার খুড়তুতো দুই ভাই তাহার সঙ্গে এক বাসায় থাকিয়া পড়াশুনা করিত- বড়োটি উকিল হইয়া তাহদের জেলা-কোর্টে ব্যবসায় চালাইতেছে, ছোটােট কলিকাতায় থাকিতেই ওলাউঠা হইয়া মারা গিয়াছে ; খুড়ার ইচ্ছা বিনয় ডেপুটি ম্যাজিসট্রেটির চেষ্টা করে, কিন্তু বিনয় কোনো চেষ্টাই না করিয়া নানা বাজে কাজে নিযুক্ত আছে | এমনি করিয়া প্ৰায় এক ঘণ্টা কাটিয়া গেল। বিনা প্রয়োজনে আর বেশিক্ষণ থাকিলে অভদ্রত হয়, তাই বিনয় উঠিয়া পড়িল ; কহিল, “বন্ধু সতীশের সঙ্গে আমার দেখা হল না, দুঃখ রইল ; তাকে খবর দেবেন। আমি এসেছিলুম।” পরেশবাবু কহিলেন, “আর-একটু বসলেই তাদের সঙ্গে দেখা হত। তাদের ফেরবার বড়ো আর দেরি নেই।” এই কথাটুকুর উপরে নির্ভর করিয়া আবার বসিয়া পড়িতে বিনয়ের লজ্জা বোধ হইল। আর-একটু পীড়াপীড়ি করিলে সে বসিতে পারিতি- কিন্তু পরেশ অধিক কথা বলিবার বা পীড়াপীড়ি করিবার লোক নহেন, সুতরাং বিদায় লইতে হইল। পরেশ বলিলেন, “আপনি মাঝে মাঝে এলে খুশি হব।” রাস্তায় বাহির হইয়া বিনয় বাড়ির দিকে ফিরিবার কোনো প্রয়োজন অনুভব করিল না। সেখানে কোনো কাজ নাই। বিনয় কাগজে লিখিয়া থাকে- তাহার ইংরেজি লেখার সকলে খুব তারিফ করে, কিন্তু গত কয়দিন হইতে লিখিতে বসিলে লেখা মাথায় আসে না । টেবিলের সামনে বেশিক্ষণ বসিয়া থাকাই দায়— মন ছটফট করিয়া উঠে। বিনয় তাই আজ বিনা কারণেই উলটা দিকে চলিল। দু পা যাইতেই একটি বালক-কণ্ঠের চীৎকারধ্বনি শুনিতে পাইল, “বিনয়বাবু, বিনয়বাবু!" | মুখ তুলিয়া দেখিল একটি ভাড়াটে গাড়ির দরজার কাছে ঝুঁকিয়া পড়িয়া সতীশ তাহাকে ডাকাডাকি করিতেছে। গাড়ির ভিতরের আসনে খানিকটা শাড়ি, খানিকটা সাদা জামার আস্তিন, যেটুকু দেখা গেল তাহাতে আরোহীটি যে কে তাহা বুঝিতে কোনো সন্দেহ রহিল না। বাঙালি ভদ্রতার সংস্কার অনুসারে গাড়ির দিকে দৃষ্টি রক্ষা করা বিনয়ের পক্ষে শক্ত হইয়া উঠিল। সুস্থ গোখলে গড ইত বলি সতীশ আসয় গুহারস্থাত খািল কহিল,"আিম আমাদের " বিনয় কহিল, “আমি যে তোমাদের বাড়ি থেকে এখনই আসছি।” সতীশ । বা, আমরা যে ছিলুম না, আবার চলুন। সতীশের পীড়াপীড়ি বিনয় অগ্রাহা করিতে পারিল না। বন্দীকে লইয়া বাড়িতে প্রবেশ করিয়াই সতীশ উচ্চস্বরে কহিল, “বাবা, বিনয়বাবুকে এনেছি।” বৃদ্ধ ঘর হইতে বাহির হইয়া ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, “শক্ত হাতে ধরা পড়েছেন, শীঘ্র ছাড়া পাবেন না। সতীশ, তোর দিদিকে ডেকে দে।” বিনয় ঘরে আসিয়া বসিল, তাহার হৃৎপিণ্ড বেগে উঠতে পড়িতে লাগিল। পরেশ কহিলেন, “হাঁপিয়ে পড়েছেন বুঝি ! সতীশ ভারি দুরন্ত ছেলে।” ঘরে যখন সতীশ তাহার দিদিকে লইয়া প্রবেশ করিল। তখন বিনয় প্রথমে একটি মৃদু সুগন্ধ অনুভব করিল— তাহার পরে শুনিল পরেশবাবু বলিতেছেন, “রাধে, বিনয়বাবু এসেছেন। এঁকে তো তুমি জােনই ।” বিনয় চকিতের মতো মুখ তুলিয়া দেখিল, সুচরিতা তাহাকে নমস্কার করিয়া সামনের চৌকিতে বসিল— এবার বিনয় প্রতিনমস্কার করিতে ভুলিল না । । সুচরিতা কহিল, “উনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওঁকে দেখবামাত্র সতীশকে আর ধরে রাখা গেল না, সে গাড়ি থেকে নেমেই ওঁকে টেনে নিয়ে এল। আপনি হয়তাে কোনাে কাজে যাচ্ছিলেন- আপনার (ठ (कना उभूदिक्ष श्श नेि ?”