পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(5k 8の(2 বরদার প্রথম সন্তান মনোরঞ্জন নয় বছর বয়সে মারা গেছে। যে-কোনো যুবক কোনো বড়ো পাস করিয়াছে, বা বড়ো পদ পাইয়াছে ভালো বই লিখিয়াছে, বা কোনো ভালো কাজ করিয়াছে শোনেন, , বরদার তখনই মনে হয় মনু বাচিয়া থাকিলে তাহার দ্বারাও ঠিক এইগুলি ঘটিত । যাহা হউক সে যখন নাই তখন বর্তমানে জনসমাজে তাহার মেয়ে তিনটির গুণপ্রচারই বরদাসুন্দরীর একটা বিশেষ কর্তব্যের মধ্যে ছিল। তাহার মেয়েরা যে খুব পড়াশুনা করিতেছে। এ কথা বরদা বিশেষ করিয়া বিনয়কে জানাইলেন, মেম তাহার মেয়েদের বুদ্ধি ও গুণাপনা সম্বন্ধে কবে কী বলিয়াছিল তাহাও বিনয়ের অগোচর রহিল না। যখন মেয়ে-ইস্কুলে প্রাইজ দিবার সময় লেফটেনেন্ট গবর্নর এবং তঁহার স্ত্রী আসিয়াছিলেন তখন তাহাদিগকে তোড়া দিবার জন্য ইস্কুলের সমস্ত মেয়েদের মধ্যে লাবণ্যকেই বিশেষ করিয়া বাছিয়া লওয়া হইয়াছিল এবং গবর্নরের স্ত্রী লাবণ্যকে উৎসাহজনক কী-একটা মিষ্টবাক্য বলিয়াছিলেন তাহাও বিনয় শুনিল । অবশেষে বরদা লাবণ্যকে বলিলেন, “যে সেলাইটার জন্যে তুমি প্রাইজ পেয়েছিলে সেইটে নিয়ে G? (NEN AN ” একটা পশমের-সেলাই-করা টিয়াপাখির মূর্তি এই বাড়ির আত্মীয়বন্ধুদের নিকট বিখ্যাত হইয়া উঠিয়ছিল। মেমের সহযোগিতায় এই জিনিসটা লাবণ্য অনেক দিন হইল রচনা করিয়াছিল, এই রচনায় লবণের নিজের কৃতিত্ব যে খুব বেশি ছিল তাহাও নহে— কিন্তু নূতন-আলাপী মাত্রকেই এটা দেখাইতে হইবে সেটা ধরা কথা ! পরেশ প্রথম প্রথম আপত্তি করিতেন, কিন্তু সম্পূর্ণ নিস্ফল জানিয়া এখন আর আপত্তিও করেন না। এই পশমের টিয়াপাখির রচনানৈপুণ্য লইয়া যখন বিনয় দুই চক্ষু বিস্ময়ে বিস্ফারিত করিয়াছে তখন বেহাৱা আসিয়া একখানি চিঠি পরেশের হাতে দিল । চিঠি পড়িয়া পরেশ প্রফুল্ল হইয়া উঠিলেন ; কহিলেন, “‘বাবুকে উপরে নিয়ে আয় ।” বরদা জিজ্ঞাসা করিলেন, " কে ?” পরেশ কহিলেন, “আমার ছেলেবেলাকার বন্ধু কৃষ্ণদয়াল তীর ছেলেকে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করবার জন্যে পাঠিয়েছেন ৷” হঠাৎ বিনয়ের হৃৎপিণ্ড লাফাইয়া উঠিল এবং তাহার মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল। তাহার পরীক্ষণেই সে হাত মুঠা করিয়া বেশ একটু শক্ত হইয়া বসিল, যেন কোনাে প্রতিকূল পক্ষের বিরুদ্ধে সে নিজেকে দৃঢ় রাখিবার জন্য প্রস্তুত হইয়া উঠিল । গোরা যে এই পরিবারের লোকদিগকে অশ্রদ্ধার সহিত দেখিবে ও বিচার করিবে ইহা আগে হইতেই বিনয়কে যেন কিছু উত্তেজিত করিয়া তুলিল । > O খুঞ্চের উপর জলখাবার ও চায়ের সরঞ্জাম সাজাইয়া চাকরের হাতে দিয়া সুচরিতা ছাতে আসিয়া বসিল এবং সেই মুহূর্তে বেহারিার সঙ্গে গোরাও আসিয়া প্রবেশ করিল। সুদীর্ঘ শুভ্রকায় গােরার আকৃতি আয়তন ও সাজ দেখিয়া সকলেই বিস্মিত হইয়া উঠিল। গোরার কপালে গঙ্গামৃত্তিকার ছাপ, পরনে মোটা ধুতির উপর ফিতা বাধা জামা ও মোটা চাদর, পায়ে শুড়তোলা কটকি জুতা। সে যেন বর্তমান কালের বিরুদ্ধে এক মূর্তিমান বিদ্রোহের মতো আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহার এরূপ সাজসজ্জা বিনয়ও পূর্বে কখনো দেখে নাই। আজ গোরার মনে একটা বিরোধের আগুন বিশেষ করিয়াই জ্বলিতেছিল । তাহার কারণও शशिांछिल । গ্রহণের স্নান-উপলক্ষে কোনো স্টীমার-কোম্পানি কাল প্রত্যুষে যাত্রী লইয়া ত্ৰিবেণী রওনা হইয়াছিল। পথের মধ্যে মধ্যে এক-এক স্টেশন হইতে বহুতর স্ত্রীলোক যাত্রী দুই-এক জন পুরুষ-অভিভাবক সঙ্গে লইয়া জাহাজে উঠিতেছিল। পাছে জায়গা না পায় এজন্য ভারি ঠেলাঠেলি পড়িয়ছিল। পায়ে কাদা লইয়া জাহাজে চড়িবার তক্তাখানার উপরে টানাটানির চোটে পিছলে কেহ বা