পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8SO রবীন্দ্র-রচনাবলী কাছাকাছি হল, এখন ওকে পাত্ৰস্থ করবার সময় হয়েছে। কোন লক্ষ্মীছাড়ার হাতে পড়বে এই ভেবে আমার তো রাত্রে ঘুম হয় না।” বিনয় কহিল, “ব্যস্ত হচ্ছেন কেন- এখনো সময় আছে।” মহিম । নিজের মেয়ে যদি থাকত তো বুঝতে কেন ব্যস্ত হচ্ছি। বছর গেলেই বয়েস আপনি বাড়ে কিন্তু পাত্র তো আপনি আসে না । কাজেই দিন যত যায় মন ততই ব্যাকুল হয়ে ওঠে । এখন, তুমি যদি একটু আশ্বাস দাও তা হলে নাহয় দু-দিন সবুর করতেও পারি। বিনয় । আমার তো বেশি লোকের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় নেই- কলকাতার মধ্যে আপনাদের বাড়ি ছাড়া আর-কোনো বাড়ি জানি নে বললেই হয়— তবু আমি খোজ করে দেখব । মহিম । শশিমুখীর স্বভাব্যচরিত্র তো জান । ܫ-- বিনয় । জানি বৈকি। ওকে এতটুকু বেলা থেকে দেখে আসছি— লক্ষ্মী মেয়ে । মহিম। তবে আর বেশিদূর খোজ করবার কী দরকার বাপু ? ও মেয়ে তোমারই হাতে সমর্পণ করব । বিনয় ব্যস্ত হইয়া উঠিয়া কহিল, “বলেন কী ?” মহিম । কেন, অন্যায় কী বলেছি! অবশ্য, কুলে তোমরা আমাদের চেয়ে অনেক বড়ো— কিন্তু বিনয়, এত পড়াশুনা করে যদি তোমরা কুল মানবে তবে হল কী ! বিনয় । না, না, কুলের কথা হচ্ছে না, কিন্তু বয়েস যেমহিম । বল কী ! শশীর বয়েস কম কী হল ! হিন্দুর ঘরের মেয়ে তো মেমসাহেব নয়- সমাজকে তো উড়িয়ে দিলে চলে না । মহিম সহজে ছাড়িবার পাত্র নহেন— বিনয়কে তিনি অস্থির করিয়া তুলিলেন । অবশেষে বিনয় কহিল, “আমাকে একটু ভাববার সময় দিন ।” মহিম । আমি তো আজ রাত্রেই দিন স্থির করছি - নে । বিনয় । তবু বাড়ির লোকদেরমহিম । হা, সে তো বটেই। তাদের মত নিতে হবে বৈকি। তোমার খুড়োমশায় যখন বর্তমান আছেন তার অমতে তো কিছু হতে পারে না । এই বলিয়া পকেট হইতে দ্বিতীয় পানের দোনা নিঃশেষ করিয়া যেন কথাটা পাকাপাকি হইয়া আসিয়াছে এইরূপ ভাব করিয়া মহিম চলিয়া গেলেন । কিছুদিন পূর্বে আনন্দময়ী একবার শশিমুখীর সঙ্গে বিনয়ের বিবাহের প্রস্তাব আভাসে উত্থাপন করিয়াছিলেন । কিন্তু বিনয় তাহা কানেও তোলে নাই । আজও প্রস্তাবটা যে বিশেষ সংগত বোধ হইল। তাহা নহে। কিন্তু তবু কথাটা মনের মধ্যে একটুখানি যেন স্থান পাইল । বিনয়ের মনে হইল। এই বিবাহ ঘটিলে আত্মীয়তা-সম্বন্ধে গোরা তাহাকে কোনোদিন ঠেলিতে পরিবে না । বিবাহ-ব্যাপারটাকে হৃদয়াবেগের সঙ্গে জড়িত করাকে ইংরেজিয়ানা বলিয়াই সে এতদিন পরিহাস করিয়া আসিয়াছে, তাই শশিমুখীকে বিবাহ করাটা তাহার কাছে অসম্ভব বলিয়া বােধ হইল না। মহিমের এই প্রস্তাব লইয়া গােরার সঙ্গে পরামর্শ করিবার যে একটা উপলক্ষ জুটিল আপাতত ইহাতেই সে খুশি হইল। বিনয়ের ইচ্ছা গোরা এই লইয়া তাহাকে একটু পীড়াপীড়ি করে। মহিমাকে সহজে সম্মতি না দিলে মহিম গোরাকে দিয়া তাহাকে অনুরোধ করাইবার চেষ্টা করিবে ইহাতে বিনয়ের সন্দেহ ছিল না। এই-সমস্ত আলোচনা করিয়া বিনয়ের মনের অবসাদ কাটিয়া গেল । সে তখনই গোরার বাড়ি যাইবার জন্য প্রস্তুত হইয়া চাদর কঁধে বাহির হইয়া পড়িল । অল্প একটু দূর যাইতেই পশ্চাৎ হইতে শুনিতে পাইল, “বিনয়বাবু।” পিছন ফিরিয়া দেখিল সতীশ তাহাকে ডাকিতেছে। সতীশকে সঙ্গে লইয়া আবার বিনয় বাসায় প্রবেশ করিল। সতীশ পকেট হইতে রুমালের পুঁটুলি বাহির করিয়া কহিল, “এর মধ্যে কী আছে বলুন দেখি ।” বিনয় “মড়ার মাথা” “কুকুরের বাচ্ছা” প্রভৃতি নানা অসম্ভব জিনিসের নাম করিয়া সতীশের নিকট pa.