পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

((8 রবীন্দ্র-রচনাবলী বেহার কহিল, “আছেন।” পরীক্ষাঘরের মুখে ছাত্র যেমন করিয়া যায় বিনয় তেমনি করিয়া উপরে চলিল। ঘরের দ্বারের কাছে “বিনয়বাবু, আসুন ।” সেই স্বর শুনিয়া বিনয়ের মনে হইল যেন সে একটা অপ্রত্যাশিত ধন পাইল। বিনয় ঘরে ঢুকিলে সুচরিতা এবং ললিতা তাহাকে দেখিয়া আশ্চর্য হইল। সে যে কত অকস্মাৎ কী কঠিন আঘাত পাইয়াছে তাহা এই অল্প সময়ের মধ্যে তাহার মুখে চিহ্নিত হইয়া গিয়াছে। যে সরস শ্যামল ক্ষেত্রের উপর দিয়া হঠাৎ কোথা হইতে পঙ্গপাল পড়িয়া চলিয়া গিয়াছে বিনয়ের নিত্যসহাসি৷ মুখের সেই ক্ষেত্রের মতো চেহারা হইয়াছে। ললিতার মনে বেদনা এবং করুণার সঙ্গে একটু আনন্দের আভাসও দেখা দিল । অন্য দিন হইলে ললিতা সহসা বিনয়ের সঙ্গে কথা আরম্ভ করিত না- আজ যেমনি বিনয় ঘরে প্রবেশ করিল অমনি সে বলিয়া উঠিল, “বিনয়বাবু, আপনার সঙ্গে আমাদের একটা পরামর্শ আছে।” বিনয়ের বুকে কে যেন হঠাৎ একটা শব্দভেদী আনন্দের বাণ ছুড়িয়া মারিল । সে উল্লাসে চকিত হইয়া উঠিল। তাহার বিবৰ্ণ স্নান মুখে মুহূর্তেই দীপ্তির সঞ্চার হইল। ললিত কহিল, “আমরা কয় বােনে মিলে একটি ছোটােখাটাে মেয়ে-ইস্কুল করতে চাই।” বিনয় উৎসাহিত হইয়া উঠিয়া কহিল, “মেয়ে-ইস্কুল করা অনেক দিন থেকে আমার জীবনের একটা সংকল্প ।” ললিত কহিল, “আপনাকে এ বিষয়ে আমাদের সাহায্য করতে হবে ।” বিনয় কহিল, “আমার দ্বারা যা হতে পারে তার কোনো ত্রুটি হবে না। আমাকে কী করতে হবে বলুন।” ললিত কহিল, “আমরা ব্ৰাহ্ম বলে হিন্দু অভিভাবকেরা আমাদের বিশ্বাস করে না। এ বিষয়ে আপনাকে চেষ্টা দেখতে হবে ।” বিনয় উদ্দীপ্ত হইয়া উঠিয়া কহিল, “আপনি কিছু ভয় করবেন না— আমি পারব।” আনন্দময়ী কহিলেন, “তা ও খুব পারবে। লোককে কথায় ভুলিয়ে বশ করতে ওর জুড়ি কেউ নেই ।” ললিত কহিল, “বিদ্যালয়ের কাজকর্ম যে নিয়মে যেরকম করে চালানো উচিত— সময় ভাগ করা, ক্লাস ভাগ করা, বই ঠিক করে দেওয়া, এ-সমস্তই আপনাকে করে দিতে হবে ।” এ কাজটাও বিনয়ের পক্ষে শক্ত নহে, কিন্তু তাহার ধাধা লাগিয়া গেল। বরদাসুন্দরী তাহার মেয়েদের সহিত তাহাকে মিশিতে নিষেধ করিয়া দিয়াছেন এবং সমাজে তাঁহাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলিতেছে, এ কথাটা কি ললিতা একেবারেই জানে না ? এ স্থলে বিনয় যদি ললিতার অনুরোধ রাখিতে প্ৰতিশ্রুত হয় তবে সেটা অন্যায় এবং ললিতার পক্ষে অনিষ্টকর হইবে কি না। এই প্রশ্ন তাহাকে আঘাত করিতে লাগিল। এ দিকে ললিতা যদি কোনাে শুভকর্মে তাহার সাহায্য প্রার্থনা করে তবে সমস্ত চেষ্টা দিয়া সেই অনুরোধ পালন না করিবে এমন শক্তি বিনয়ের কোথায়? এ পক্ষে সুচরিতাও আশ্চর্য হইয়া গেছে। সে স্বপ্নেও মনে করে নাই ললিত হঠাৎ এমন করিয়া বিনয়কে মেয়েইস্কুলের জন্য অনুরোধ করবে। একে তাে বিনয়কে লইয়া যথেষ্ট জটিলতার সৃষ্টি হইয়াছে তাহার পরে এ আবার কী কাণ্ড! ললিতা জানিয়া-শুনিয়া ইচ্ছাপূর্বক এই ব্যাপারটি ঘটাইয় তুলিতে উদ্যত হইয়াছে দেখিয়া সুচরিতা ভীত হইয়া উঠিল। ললিতার মনে বিদ্রোহ জাগিয়া উঠিয়াই তাহা সে বুঝিল, কিন্তু বেচারা বিনয়কে এই উৎপাতের মধ্যে জড়িত করা কি তাহার উচিত হইতেছে ? সুচরিতা উৎকণ্ঠিত হইয়া বলিয়া উঠিল, “এ সম্বন্ধে একবার বাবার সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে তো। W মুকুটুম্বুল ফসপ্টোর পর গেলেন বলে নিবন্ধু একই নে খুব বেশ আশীৰ্ষত হয়। 8. " সুচরিতা কৌশলে প্রস্তাবটাকে যে বাধা দিল তাহা বিনয় বুঝিতে পারিল, ইহাতে তাহার মনে আরো