পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন V) ᏔᎧ রঙ ফলাইতে কবির কী আনন্দ। যেন শ্ৰান্তি নাই, তৃপ্তি নাই। সে রঙ শুধু চিত্রপটের রঙ নহে, তাহাতে কবিত্বে রঙ, ভাবের রঙ আছে। অর্থাৎ, কোন জিনিসের কী রঙ শুধু সেই বর্ণনামাত্র নহে, তাহার মধ্যে হৃদয়ের অংশ আছে। তাহার একটি দৃষ্টান্ত উদধূত করিলে কথাটা পরিষ্কার হইবে। কথাটা এই যে, ব্যাধি গাছের উপর চড়িয়া নীড় হইতে পক্ষিশাবকগুলিকে পাড়িতেছে- সেই অনুপজািত-উৎপতনশক্তি শাবকগুলির কেমন রঙ ? কিংশ্চিদল্পদিবসজাতন গৰ্ভচ্ছবিপাটলািন শাল্মলিকুসুমশঙ্কামুপিজনীয়তঃ, কংশ্চিদুদভিদ্যমানপক্ষতয়া নলিনসংবর্তিকানুকারিণঃ, কংশ্চিন্দর্কোপলসদৃশান, কংশ্চিল্লোহিতায়মানচষ্ণুকোটীন ঈষদুবিঘটিতদলপুটপাটলমূখানাং কমলমুকুলানাং শ্রিয়মূদবহতঃ, কংশ্চিন্দনবরতশিরঃকম্পব্যাজেন নিবারয়ত ইব, প্রতিকারাসমৰ্থন একৈকশঃফলানীবিতস্য বনস্পতেঃ শাখাসন্ধিভাঃ কোটরাভ্যন্তরেভ্যশ্চ শুকশবকানগ্রহীৎ, অপগতাসূংশ্চ কৃত্বা ক্ষিতাবপতয়ং। কেহ বা অল্পদিবসজাত, তাহাদের নবপ্রসূত কমনীয় পাটলকান্তি যেন শাল্মলিকুসুমের মতো ; কাহারও পদ্মের নূতন পাপড়ির মতো অল্প-অল্প ডানা উঠিতেছে ; কাহারও বা পদ্মরাগের মতো বৰ্ণ ; কাহারও বা লোহিতায়মান চঞ্চুর অগ্রভাগ ঈষৎ উন্মুক্তমুখ কমলের মতো ; কাহারও বা মস্তক অনবরত কম্পিত হইতেছে, যেন ব্যাধকে নিবারণ করিতেছে ; এই সমস্ত প্রতিকারে-অসমর্থ শুকশিশুগুলিকে বনস্পতির শাখাসন্ধি ও কোটরাভ্যন্তর হইতে এক-একটি ফলের মতো গ্রহণপূর্বক গতিপ্ৰাণ করিয়া ক্ষিতিতলে নিক্ষেপ করিতে লাগিল। ইহার মধ্যে কেবল বর্ণবিন্যাস নহে, তাহার সঙ্গে করুণা মাখনো রহিয়াছে ; অথচ কবি তাহা স্পষ্টত হাহুতাশ করিয়া বৰ্ণনা করেন নাই-বৰ্ণনার মধ্যে কেবল তুলনাগুলির সীেকুমার্যে তাহা আপনি ফুটিয়া উঠিয়াছে। কিন্তু এমন করিলে প্ৰবন্ধ শেষ হইবে না। কারণ, কাদম্বরীর মধ্যে প্রলোভন রাশি রাশি ; এই কুঞ্জবনের গলিতে গলিতে নব নব বর্ণের পুষ্পিত লতাবিতান, এখানে সমালোচক যদি মধুপানে প্রবৃত্ত হয় তবে তাহার গুঞ্জনধ্বনি বন্ধ হইয়া যাইবে । বাস্তবিক আমার সমালোচনা করিবার উদ্দেশ্য ছিল না ; কেবলমাত্র প্রলোভনে পড়িয়া এ পথে আকৃষ্ট হইয়াছি। যে উপলক্ষে এই প্রবন্ধ লিখিতে বসিয়াছিলাম, কিন্তু কিছুদূর অগ্রসর হইয়াই বুঝতেছি এ পথ সংক্ষিপ্ত নহে, এই রসম্রোতে আত্মসমর্পণ করিলে লক্ষাপথে আর শীঘ্ৰ ফিরিতে পারিব না । বর্তমানসংখ্যক “প্রদীপে যে চিত্রটি মুদ্রিত হইয়াছে সেই চিত্র অবলম্বন করিয়া কিছু লিখিতে অনুরুদ্ধ হইয়াছিলাম। ইহার মূল পটটি বর্ণতৈল-অঙ্কিত, বিষয়টি কাদম্বরী হইতে গৃহীত এবং চিত্রকর আমার স্নেহাস্পদ তরুণবয়স্ক আত্মীয় শ্ৰীমান যামিনীপ্ৰকাশ গঙ্গোপাধ্যায়। এ কথা নিশ্চয়, সংস্কৃত-সাহিত্যে আঁকিবার বিষয়ের অভাব নাই। কিন্তু শিল্প-বিদ্যালয়ে আমাদিগকে অগত্যা যুরোপীয় চিত্রদির অনুকরণ করিয়া আঁকিতে শিখিতে হয়। তাহাতে হাত এবং মন বিলাতী ছবির ছাচে প্রস্তুত হইয়া যায়, তাহার আর কোনাে উপায় থাকে না । সেই অভ্যন্ত পথ হইতে প্রত্যাবৃত্ত, ইয়া দেশী চক্ষু দিয়া দেশী চিত্রবিষয়কে দেখা আমাদের পক্ষে বড়ো কঠিন। যামিনীপ্ৰকাশ অল্প বয়সেই সেই কঠিন ব্ৰত গ্রহণ করিয়াছেন, এবং তাহার প্রথম চেষ্টার যথেষ্ট সফলতা দেখিয়াই প্রদীপের শিল্পানুরাগী বন্ধু ও কর্তৃপক্ষ গণ আগ্রহের সহিত এই চিত্রের প্রতিকৃতি মুদ্রিত করতে প্রবৃত্ত ইয়াছেন এবং আমাকে ইহার ভূমিকা লিখিতে অনুরোধ করিয়াছেন। কাদম্বরীর যে প্রসঙ্গটি চিত্রে বিবৃত হইয়াছে সেইটি সংস্কৃত হইতে বাংলায় ব্যাখ্যা করিলেই ইহার উপযুক্ত ভূমিকা হয়। সেই প্রসঙ্গটি কাদম্বরীর ঠিক প্রবেশদ্বারেই। আলােচনা করিতে করিতে ঠিক সেই পর্যন্তই আসিয়াছিলাম, কিন্তু লোভে পড়িয়া নানা দিকে বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িয়াছিলাম, পুনর্বার সেইখানে ফেরা যাক - নবপ্রভাতে রাজা শূদ্রক সভাতলে বসিয়া আছেন এমন সময় প্রতিহারী আসিয়া