পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য ዓ6w© স্বৰ্গলোক হইতে আসিয়াছে। আমাদের মতো সুদীর্ঘকাল নিয়মের দাসত্বে অভ্যন্ত হয় নাই, এইজন্য সে ক্ষুদ্রশক্তি-অনুসারে সমুদ্রতীরে বালির ঘর এবং মনের মধ্যে ছড়ার ছবি স্বেচ্ছামত রচনা করিয়া মর্তলোকে দেবতার জগৎলীলার অনুকরণ করে। এইজন্যই আমাদের শাস্ত্ৰে ঈশ্বরের কার্যের সহিত বালকের লীলার সর্বদা তুলনা দেওয়া হইয়া থাকে, উভয়ের মধ্যেই একটা ইচ্ছাময় আনন্দের সাদৃশ্য আছে | পূর্বোদধূত ছড়াটিতে সংলগ্নতা নাই, কিন্তু ছবি আছে। কাজিতলা, ত্রিপূর্ণর ঘাট, এবং ওড়বনের ঘটনাগুলি স্বপ্নের মতো অদ্ভুত কিন্তু স্বপ্নের মতো সত্যবং। স্বপ্নের মতো সত্য বলতে পাঠকগণ আমার বুদ্ধির সজাগতা সম্বন্ধে সন্দিহান হইবেন না। অনেক দার্শনিক পণ্ডিত প্রত্যক্ষ জগৎটাকে স্বপ্ন বলিয়া উড়াইয়া দিয়াছেন। কিন্তু সেই পণ্ডিত স্বপ্নকে উড়াইতে পারেন নাই। তিনি বলেন, প্রত্যক্ষ সত্য নাই- তবে কী আছে ? না, স্বপ্ন আছে। অতএব দেখা যাইতেছে প্রবল যুক্তিদ্বারা সত্যকে অস্বীকার করা সহজ, কিন্তু স্বপ্নকে অস্বীকার করিবার জো নাই। কেবল সজাগ স্বপ্ন নহে, নিদ্রাগত স্বপ্ন সম্বন্ধেও এই কথা খাটে। সুতীক্ষ্ণবুদ্ধি পণ্ডিতেরও সাধ্য নাই স্বপ্নাবস্থায় স্বপ্নকে অবিশ্বাস করেন। জাগ্ৰত অবস্থায় তাহারা সম্ভব সত্যকেও সন্দেহ করিতে ছাড়েন না, কিন্তু স্বপ্নাবস্থায় তাহারা চরমতম অসম্ভবকে অসংশয়ে গ্ৰহণ করেন। অতএব বিশ্বাসজনকতা-নামক যে গুণটি সত্যের সর্বপ্রধান গুণ হওয়া উচিত সেটা যেমন স্বপ্নের আছে এমন আর কিছুরই নাই। এতদ্বারা পাঠক এই কথা বুঝিবেন যে, প্রত্যক্ষ জগৎ আমাদের কাছে যতটা সত্য, ছড়ার স্বল্পজগৎ নিত্যস্বপ্নদশী বালকের নিকট তদপেক্ষা অনেক অধিক সত্য | এইজন্য অনেক সময় সত্যকেও আমরা অসম্ভব বলিয়া ত্যাগ করি এবং তাহারা অসম্ভবকেও সত্য বলিয়া গ্ৰহণ করে। বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদী এলো বান। শিবু ঠাকুরের বিয়ে হল, তিন কন্যে দান ৷ এক কন্যে রাধেন বাড়েন, এক কন্যে খান । এক কন্যে না খেয়ে বাপের বাড়ি যান ৷ এ বয়সে এই ছড়াটি শুনিবামাত্র বােধ করি প্রথমেই মনে হয়, শিবুঠাকুর যে তিনটি কন্যাকে বিবাহ করিয়াছেন তন্মধ্যে মধ্যম কন্যাটিই সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমতী । কিন্তু এক বয়স ছিল যখন এতাদৃশ চরিত্রবিশ্লেষণের ক্ষমতা ছিল না। তখন এই চারিটি ছত্র আমার বাল্যকালের মেঘদূতের মতো ছিল। আমার মানসপট একটি ঘনমেঘান্ধকার বাদলার দিন এবং উত্তালতরঙ্গিত নদী মূর্তিমান হইয়া দেখা দিত। তাহার পর দেখিতে পাইতাম সেই নদীর প্রান্তে বালুর চরে গুটিদুয়েক পানসি নীেকা বাধা আছে এবং শিবুঠাকুরের নববিবাহিতা বধূগণ চড়ায় নামিয়া রাধাবাড়া করিতেছেন। সত্য কথা বলতে কি, শিবুঠাকুরের জীবনটিকে বড়ো সুখের জীবন মনে করিয়া চিত্ত কিছু ব্যাকুল হইত। এমনকি, তৃতীয়া বধূঠাকুরানী মর্মান্তিক রাগ করিয়া দ্রুতচরণে বাপের বাড়ি অভিমুখে চলিয়াছেন, সেই ছবিতেও আমার এই সুখচিত্রের কিছুমাত্র ব্যাঘাত সাধন করিতে পারে নাই। এই নির্বোিধ তখনাে বুঝতে পারিত না ঐ একটিমাত্র ছত্রে হতভাগ্য শিবুঠাকুরের জীবনে কী এক হৃদয়বিদারক শোকাবহ পরিণাম সূচিত ইয়াছে। কিন্তু পূর্বেই বলিয়াছ, চরিত্রবিশ্লেষণ অপেক্ষা চিত্রবিরচনের দিকেই তখন মনের গতিটা ছিল। এখন বুঝতে পারিতেছি, হতবুদ্ধি শিবুঠাকুর তদীয় কনিষ্ঠজায়ার অকস্মাং পিতৃগৃহপ্রয়াণদৃশ্যটিকে ঠিক মনোরম চিত্র হিসাবে দেখেন নাই । এই শিবুঠাকুর কি কস্মিন কালে কেহ ছিল, এক-একবার এ কথাও মনে উদয় হয়। হয়তাে বা ছিল। হয়তো এই ছড়ার মধ্যে পুরাতন বিস্মৃত ইতিহাসের অতিক্ষুদ্র এক ভগ্ন অংশ থাকিয়া গিয়াছে। আর-কোনো ছড়ায় হয়তো বা ইহার আর-এক টুকরা থাকিতে পারে। ७ ° १, ७ ° १ाक्रां, शशिोथं6न फ्रेञ् । তারি মধ্যে বসে আছে শিব সদাগর ॥