পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য ዓ(፩ ፩ মধ্যে একটি স্ত্রীলোক ছিলেন ; তিনি বলিলেন, দশ পা চলা কিছুই আশ্চর্য নহে, উহার সেই প্রথম পা চলাটাই আশ্চর্য । সৃষ্টিরও সেইরূপ প্রথম পদক্ষেপটাই মহাশ্চর্য কিছু যে হইয়াছে ইহাই প্রথম বিস্ময় এবং পরম ; বিস্ময়ের বিষয়, তাহার পরে আরো যে কিছু হইতে পারে তাঁহাতে আশ্চর্য কী। বালক সেই প্রথম আশ্চর্যটার প্রতি প্রথম দৃষ্টিপাত করিতেছে— সে চক্ষু মেলিবামত্ৰ দেখিতেছে অনেক জিনিস আছে, আরো অনেক জিনিস থাকাও তাহার পক্ষে কিছুই অসম্ভব নহে, এইজন্য ছড়ার দেশে সম্ভব-অসম্ভবের মধ্যে সীমানা-ঘটিত কোনো বিবাদ নাই— আয় রে আয় টিয়ে নায়ে ভরা দিয়ে ৷ না নিয়ে গেল বোয়াল মাছে । তা দেখে দেখে ভোদর নাচে ৷ ওরে ভোদর ফিরে চা ৷ খোকার নাচন দেখে যা ৷ প্রথমত, টিয়ে পাখি নীেকা চড়িয়া আসিতেছে এমন দৃশ্য কোনাে বালক তাহার পিতার বয়সেও দেখে নাই ; বালকের পিতার সম্বন্ধেও সে কথা খাটে। কিন্তু সেই অপূর্বতাই তাহার প্রধান কৌতুক। বিশেষত, হঠাৎ যখন অগাধ জলের মধ্য হইতে একটা স্ফীতকায় বােয়াল মাছ উঠিয়া, বলা নাই, কাহা নাই, খামক তাহার নীেকাখানা লইয়া চলিল এবং ক্রুদ্ধ ও ব্যতিব্যস্ত টিয়া মাথার রেওয়া ফুলাইয়া পাখা ঝাপটাইয়া অত্যুচ্চ চীংকারে আপত্তি প্রকাশ করিতে থাকিল তখন কীের্তৃক আরো বাড়িয়া উঠে। টিয়া বেচারার দুৰ্গতি এবং জলচর প্রাণীটার নিতান্ত অভদ্র ব্যবহার দেখিয়া অকস্মাং ভোদরের দুৰ্নিবার নৃত্যুম্পুহাও বড়ো চমৎকার। এবং সেই আনন্দনৰ্তনপর নিষ্ঠুর ভেদরটিকে নিজের নৃত্যবেগ সংবরণপূর্বক খােকার নৃত্য দেখিবার জন্য ফিরিয়া চাহিতে অনুরোধ করার মধ্যেও বিস্তুর রস আছে। যেমন মিষ্ট ছন্দ শুনিলেই তাহাকে গানে বাধিয়া গাহিতে ইচ্ছা করে তেমনি এই সকল ভাষার চিত্র দেখিলেই ইহাদিগকে রেখার চিত্রে অনুবাদ করিয়া আঁকিয়া ফেলিতে ইচ্ছা করে। কিন্তু হায়, এ সকল চিত্রের রস নষ্ট না করিয়া ইহাদের বাল্য সরলতা, উজ্জ্বল নবীনতা, অসংশয়তা, অসম্ভবের সহজ সম্ভবতা রক্ষা করিয়া আঁকিতে পারে এমন চিত্রকর আমাদের দেশে কােথায় এবং বােধ করি সর্বত্রই मूर्लङ | খোকা যাবে মাছ ধরতে ক্ষীরনদীর কুলে। ছিপ নিয়ে গেল কোলা ব্যাঙে, মাছ নিয়ে গেল চিলে৷ খোকা বলে পাখিটি কোন বিলে চরে। খোকা বলে ডাক দিলে উড়ে এসে পড়ে ৷ ক্ষীরনদীর কূলে মাছ ধরতে গিয়া খােকা যে কী সংকটেই পড়িয়াছিল তাহা কি তুলি দিয়া না আঁকিলে মনের ক্ষোভ মোট ? অবশ্য, ক্ষীরনদীর ভূগােলাবৃত্তান্ত খােকাবাবু আমাদের অপেক্ষা অনেক ভালো জানেন সন্দেহ নাই ; কিন্তু যে নদীতেই হউক, তিনি যে প্রজ্ঞোচিত ধৈর্যাবলম্বন করিয়া পরম গভীরভাবে নিজ আয়তনের চতুৰ্ব্বগুণ দীর্ঘ এক ছিপ ফেলিয়া মাছ ধরিতে বসিয়াছেন তাহাই যথেষ্ট কীেভুকাবহী, তাহার উপর যখন জ্বল হইতে ডাবা চক্ষু মেলিয়া একটা অত্যন্ত উৎকট গােছের ঝোল ব্যাঙ খােকার ছিপ লইয়া টান মারিয়াছে এবং অন্য দিকে ডাঙা হইতে চিল আসিয়া মাছ ছােঁ মারিয়া লইয়া চলিয়াছে, তখন তাহার বিব্রত বিস্মিত ব্যাকুল মুখের ভাব- একবার বা প্রাণপণ শক্তিতে পশ্চাতে ঝুঁকিয়া পড়িয়া ছিপ লইয়া টানাটানি, একবার বা সেই উড়ন চীরের উদ্দেশে দুই উৎসুক ব্যগ্ৰহস্ত উর্ধে উৎক্ষেপ- এ-সমস্ত চিত্র সুনিপূণ সহৃদয় চিত্রকােরর প্রত্যাশায় বহুকাল হইতে প্রতীক্ষা করিতেছে। আবার খােকার পক্ষীমূর্তিও চিত্রের বিষয় বটে। মস্ত একটা বিল চােখে পড়তেছে। তাহার ও