পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

a bの রবীন্দ্র-রচনাবলী পারটা ভালো দেখা যায় না। এ পারে তীরের কাছে একটা কোণের মতো জায়গায় বড়ো বড়ো ঘাস, বেতের ঝাড় এবং ঘন কচুর সমাবেশ ; জলে শৈবাল এবং নালফুলের বন ; তাহারই মধ্যে লম্বচঞ্চ দীর্ঘপদ গভীরপ্রকৃতি ধ্যািনশরায়ণ গোটাকতক বক-সারসের সহিত মিশিয়া খোকাবাবু ডানা গুটািইয়া নতশিরে অত্যন্ত নিবিষ্টভাবে চরিয়া বেড়াইতেছেন, এ দৃশ্যটিও বেশ এবং বিলের অনতিদূরে ভাদ্র মাসের জলমগ্ন পাকশীর্ষ ধান্যক্ষেত্রের সংলগ্ন একটি কুটির ; সেই কুটিরপ্রাঙ্গণে বীশের বেড়ার উপরে বাম হস্ত রাখিয়া দক্ষিণ হস্ত বিলের অভিমুখে সম্পূর্ণ প্রসারিত করিয়া দিয়া অপরাহের অবসানসূর্যালোকে জননী তাহার খােকাবাবুকে ডাকিতেছেন ; বেড়ার নিকট ঘরে-ফেরা বাঁধা গোরুটিও স্তিমিত কৌতুহলে সেই দিকে চাহিয়া দেখিতেছে এবং ভোজনতৃপ্ত খোকাবাবু নালবন শৈবালবনের মাঝখানে হঠাৎ মায়ের ডাক শুনিয়া সচকিতে কুটিরের দিকে চাহিয়া উড়ি-উড়ি করিতেছে সেও সুন্দর দৃশ্য- এবং তাহার পর তৃতীয় দৃশ্যে পাখিটি মা'র বুকে গিয়া তাহার কাধে মুখ লুটাইয়াছে এবং দুই ডানায় তাহাকে অনেকটা ঝাপিয়া ফেলিয়াছে এবং নিমীলিতনেত্র মা দুই হন্তে সুকোমল ডানা-সুদ্ধ তাহাকে বেষ্টন করিয়া নিবিড় স্নেহবন্ধনে বুকে বাধিয়া ধরিয়াছেন, সেও সুন্দর দেখিতে হয় । জ্যোতির্বিদগণ ছায়াপথের নীহারিকা পর্যবেক্ষণ করিতে করিতে দেখিতে পান সেই জ্যোর্তিময় বাষ্পরাশির মধ্যে মধ্যে এক-এক জায়গায় যেন বাষ্প সংহত হইয়া নক্ষত্রে পরিণত হইবার উপক্রম করিতেছে । আমাদের এই ছড়ার নীহারিকারাশির মধ্যেও সহসা স্থানে স্থানে সেইরূপ অর্ধসংহত আকারবদ্ধ কবিত্বের মূর্তি দৃষ্টিপথে পড়ে। সেই সকল নবীনসৃষ্ট কল্পনামণ্ডলের মধ্যে জটিলতা কিছুই নাই ; প্রথম বয়সের শিশু-পৃথিবীর ন্যায় এখনাে সে কিঞ্চিৎ তরল্যাবস্থায় আছে, কঠিন হইয়া উঠে নাই। একটা উদধূত করি— জাদু, এ তো বড়ো রঙ্গ জাদু, এ তো বড়ো রঙ্গ । চার কালো দেখাতে পাের যাব তোমার সঙ্গ ৷ কাক কালো, কোকিল কালো, কালো ফিঙের বেশ । তাহার অধিক কালো, কন্যে, তোমার মাথার কেশ ৷ জাদু, এ তো বড়ো রঙ্গ জাদু, এ তো বড়ো রঙ্গ । চার ধলো দেখাতে পাের যাব তোমার সঙ্গ ৷ বক ধলো, বস্ত্ৰ ধলো, ধলে রাজহংস । তাহার অধিক ধলো, কন্যে, তোমার হাতের শঙ্খ ৷ জাদু, এ তো বড়ো রঙ্গ জাদু, এ তো বড়ো রঙ্গ । চার রাঙা দেখাতে পার যাব তোমার সঙ্গ ৷ জবা রাঙা, করবী রাঙা, রাঙা কুসুমফুল | তাহার অধিক রাঙা, কন্যে, তোমার মাথার সিঁদুর ৷ জাদু, এ তো বড়ো রঙ্গ জাদু, এ তো বড়ো রঙ্গ । চার তিতো দেখাতে পাের যাব তোমার সঙ্গ ৷ নিম তিতে, নিসুন্দে তিতে, তিতো মাকাল ফল । তাহার অধিক তিতো, কন্যে, বোন-সতিনের ঘর ৷ জাদু, এ তো বড়ো রঙ্গ জাদু, এ তো বড়ো রঙ্গ । চার হিম দেখাতে পার যাব তোমার সঙ্গ ৷ হিম জল, হিম স্থল, হিম শীতলপাটি। ৷ তাহার অধিক হিম, কন্যে, তোমার বুকের ছাতি ৷