পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

2 \, Գ ՏՏ কবিদলের গানে রাধিকার যে অভিমান প্রকাশ হইয়াছে তাহা প্রায়শই এইরূপ অযোগ্য অভিমান। সাধ করে করেছিলেম দুৰ্জয় মান, শ্যামের তায় হল অপমান । শ্যামকে সাধলেম না, ফিরে চাইলেম না, কথা কইলেম না রেখে মান ৷ কৃষ্ণ সেই রাগের অনুরাগে, রাগে রাগে গো, পড়ে পাছে চন্দ্রাবলীর নবরাগে । ছিল পূর্বের যে পূর্বরাগ, আবার একি অপূর্ব রাগ, পাছে রাগে শ্যাম রাধার আদর ভুলে যায় ৷ যার মানের মানে আমায় মানে, সে না মানে তবে কী করবে। এ মানে । মাধবের কত মান না হয় তার পরিমাণ, মানিনী হয়েছি। যার মানে ৷ যে পক্ষে যখন বাড়ে অভিমান, সেই পক্ষে রাখতে হয় সম্মান । রাখতে শ্যামের মান, গোল গেল মান, আমার কিসের মান-অপমান ৷ এই কয়েক ছত্রের মধ্যে প্রেমের যেটুকু ইতিহাস যে ভাবে লিপিবদ্ধ হইয়াছে তাহাতে কৃষ্ণের উপরেও শ্রদ্ধা হয় না, রাধিকার উপরেও শ্রদ্ধা হয় না, এবং চন্দ্রাবলীর উপরেও অবজ্ঞার উদয় হয় । সর্বদাই দেখিতে পাওয়া যায় । গিরিরাজমহিষীর প্রতি উমার যে অভিমানীকলহ তাহাতে পাঠকের বিরক্তি উদ্রেক করে না— তাহা সর্বত্রই সুমিষ্ট বোধ হয় । তাহার কারণ, মাতৃস্নেহে উমর যথার্থ অধিকার সন্দেহ নাই ; কন্যা ও মাতার মধ্যে এই-যে আঘাত ও প্রতিঘাত তাহাতে মোহসমুদ্র কেবল সুন্দরভাবে তরঙ্গিত হইয়া উঠে । ኴ মাতা-কন্যা এবং নায়ক-নায়িকার মান-অভিমান যে কবিদলের গানের প্রধান বিষয় তাহার একটা কারণ, বাঙালির প্রকৃতিতে অভিমানটা কিছু বেশি ; অর্থাৎ অন্যের প্রেমের প্রতি স্বভাবতই তাহার দাবি অত্যন্ত অধিক ; এমন-কি, সে প্রেম অপ্রমাণ হইয়া গেলেও ইনিয়া-বিনিয়া কাদিয়া-রাগিয়া আপনার দাবি সে কিছুতেই ছাড়ে না। আর-একটা কারণ, এই মান-অভিমানে উত্তর-প্রত্যুত্তরের তীব্রতা এবং জয়পরাজয়ের উত্তেজনা রক্ষিত হয় । কবিওয়ালাদের গানে সাহিত্যরসের সৃষ্টি অপেক্ষা ক্ষণিক ठेठ७ीका-ठन कई अशान लझा । ধর্মভাবের উদ্দীপনাতেও নহে, রাজার সন্তোষের জন্যও নহে, কেবল সাধারণের অবসর-রঞ্জনের জন্য গান-রচনা বর্তমান বাংলায় কবিওয়ালারাই প্রথম প্রবর্তন করেন। এখনো সাহিত্যের উপর সেই সাধারণেরই আধিপত্য, কিন্তু ইতিমধ্যে সাধারণের প্রকৃতি-পরিবর্তন হইয়াছে। এবং সেই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য গভীরতা লাভ করিয়াছে। তাহার সম্যক আলোচনা করিতে গেলে স্বতন্ত্র প্রবন্ধের অবতারণা করিতে হয়, অতএব এক্ষণে তাহার প্রয়োজন নাই । কিন্তু সাধারণের যতই রুচির উৎকর্ষ ও শিক্ষার বিস্তার হউক-না কেন, তাহাদের আনন্দবিধানের জন্য স্থায়ী সাহিত্য, এবং আবশ্যক সাধন ও অবসররঞ্জনের জন্য ক্ষণিক সাহিত্যের প্রয়ােজন চিরকালই থাকিবে । এখনকার দিনে খবরের কাগজ এবং নাট্যশালাগুলি শেষোক্ত প্রয়ােজন সাধন করিতেছে। কবিদলের গানে যে-প্রকার উচ্চ আদর্শের শৈথিল এবং সুলভ অলংকারের বাহুল্য দেখা গিয়াছে, আধুনিক সংবাদপত্রে এবং অভিনয়ার্থে রচিত নাটকগুলিতেও কথঞ্চিৎ পরিবর্তিত আকারে তাহাই দেখা যায়। এই সকল ক্ষণকালজাত ক্ষণস্থায়ী সাহিত্যে ভাষা ও ভাবের ইত্যরতা, সত্য এবং