পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ృ9o রবীন্দ্র-রচনাবলী উপাচার্য। বজ্রগুদ্ধিত্রত আমাদের আয়তনে এইবার নিয়ে ঠিক সাতত্তির বার পূর্ণ হয়েছে । আর কোনো আয়তনে এ কি সম্ভবপর হয় । আচার্য । না আর কোথাও হতে পারে না । উপাচার্য। কিন্তু তবু আপনার মনে এমন দ্বিধা হচ্ছে কেন ? আচার্য। স্বতসোম, তোমার মনে কি তুমি শান্তি পেয়েছ ? উপাচার্য। আমার তো একমুহূর্তের জন্যে অশাস্তি নেই। আচার্য। অশান্তি নেই ? উপাচার্য । কিছুমাত্র না । আমার অহোরাত্র একেবারে নিয়মে বাধা । এর চেয়ে আর শান্তি কী হতে পারে ? আচার্য। ঠিক, ঠিক,—ঠিক বলেছ সুতসোম। অচেনার মধ্যে গিয়ে কোথায় তার অস্ত পাব। এখানে সমস্তই জানা, সমস্তই অভ্যস্ত—এখানকার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এখানকারই সমস্ত শাস্ত্রের ভিতর থেকে পাওয়া যায়—তার জন্যে একটুও বাইরে যাবার দরকার হয় না। এই তো নিশ্চল শান্তি ! উপাচার্য । আচার্যদেব, আপনাকে এমন বিচলিত হতে কখনো দেখি নি । আচার্য। কী জানি, আমার কেমন মনে হচ্ছে কেবল একলা আমিই না, চারিদিকে সমস্তই বিচলিত হয়ে উঠছে। আমার মনে হচ্ছে আমাদের এখানকার দেয়ালের প্রত্যেক পাথরটা পর্যন্ত বিচলিত। তুমি এটা অনুভব করতে পারছ না স্বতসোম ? উপাচার্য। কিছুমাত্র না । এখানকার অটল স্তব্ধতার লেশমাত্র বিচূতি দেখতে পাচ্ছি নে । আমাদের তো বিচলিত হবার কথাও না । আমাদের সমস্ত শিক্ষা কোন কালে সমাধা হয়ে গেছে । আমাদের সমস্ত লাভ সমাপ্ত, সমস্ত সঞ্চয় পর্যাপ্ত ওই যে পঞ্চক আসছে। পাথরের মধ্যে কি ঘাস বেরোয় । এমন ছেলে আমাদের আয়তনে কী করে সম্ভব হল । ওই আমাদের দুলক্ষণ । এই আয়তনের মধ্যে ও কেবল আপনাকেই মানে । আপনি ওকে একটু ভৎসনা করে দেবেন। আচার্য। আচ্ছা তুমি যাও। আমি ওর সঙ্গে একটু নিভৃতে কথা কয়ে দেখি । [ উপাচার্যের প্রস্থান পঞ্চকের প্রবেশ আচার্য । ( পঞ্চকের গায়ে হাত দিয়া ) বৎস, পঞ্চক । পঞ্চক। করলেন কী। আমাকে ছুলেন ? আচার্য। কেন, বাধা কী আছে ।