পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S&b" রবীন্দ্র-রচনাবলী পুরোহিত আমাকে বোধ হয় নীচ জাত মনে করে তাড়িয়ে দিলেন । সেদিন সকালে সেইখানে বসে আমার প্রভু বীণা বাজাচ্ছিলেন। তিনি তখনই মন্দির ছেড়ে এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরলেন—বললেন, এস বাবা, আমার ঘরে এস। সেই দিন থেকে ছেলের মতে তিনি আমাকে কাছে রেখে মানুষ করেছেন—লোকে তাকে কত কথা বলেছে তিনি কান দেন নি। আমি তাকে বলেছিলেম, প্রস্তু, আমাকে বীণা বাজাতে শেখান, আমি তাহলে কিছু কিছু উপার্জন করে আপনার হাতে দিতে পারব , তিনি বললেন, বাবা, এ বিদ্যা পেট ভরাবার নয় ; আমার আর এক বিস্ত জানা আছে তাই তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি। এই বলে আমাকে রং দিয়ে চিত্র করে পুথি লিখতে শিখিয়েছেন। যখন অত্যন্ত অচল হয়ে উঠত তখন তিনি মাঝে মাঝে বিদেশে গিয়ে বীণা বাজিয়ে টাকা নিয়ে আসতেন। এখানে তাকে সকলে পাগল বলেই জানত। সন্ন্যাসী। মুরসেনের বীণা শুনতে পেলেম না, কিন্তু বাবা উপনন্দ, তোমার কল্যাণে র্তার আর এক বীণা শুনে নিলুম, এর সুর কোনোদিন ভুলব না। বাবা, লেখো, লেখো । আমরা ততক্ষণ আমাদের দলবলের খবর নিয়ে আসি গে। [ প্রস্থান শেখর ও রাজা সোমপালের প্রবেশ শেখর । বিজয়াদিত্যকে তুমি হার মানাতে চাও তাহলে আগে ওই অপূর্বানন্দ সন্ন্যাসীকে বশ করে । রাজা সোমপাল, তিনিও নিশ্চয় তোমার মনের কথা জানেন । সোমপাল । কোথায় তাকে পাব ? শেখর । তিনি এখানেই এসেছেন আমি জানি । কাছাকাছি কোথাও আছেন। সোমপাল । দেখো আমি লোক চিনি । তোমাকে দেখে আমার মনে হচ্ছে তোমার দ্বারা আমার কাজ উদ্ধার হবে। শেখর । তা হতেও পারে, অসম্ভব নয়। বিজয়াদিত্যকে বশ করবার ফন্দি আমি হয়তো তোমাকে কিছু কিছু বলে দিতে পারব। সোমপাল । দেখো, তোমাকে আমি রাজমন্ত্রী করে দেব । শেখর । আমার যদি মন্ত্রণা চাও তাহলে আমাকে মন্ত্ৰী ক’রো না । মন্ত্রণা দেওয়াই যার কাজ তার মন্ত্রণ কোনো রাজার ভালো লাগে না । বিজয়াদিত্যের সভায় যে একজন কবি আছে আমি দেখেছি— সোমপাল। আরে ছি ছি, সে-ও আবার কবি হল ! ওই তে রায়শেখরের কথা ৰলছ ? শেখর । ই সেই বটে। সোমপাল। সে আমার বিদূষকেরও যোগ্য নয়।