পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8 e * রবীন্দ্র-রচনাবলী লক্ষেশ্বর । সেইজন্তেই এসেছ বটে। আমার বয়স কত আন্দাজ করছ বাপু । আমি কি শিশু । সন্ন্যাসী। কেন বাবা, তুমি কী সন্দেহ করছ ? লক্ষেশ্বর। কী সন্দেহ করছি! তুমি তা কিছু জান না! বড়ো সাধু! ভণ্ড, সন্ন্যাসী কোথাকার । ঠাকুরদাদা । আরে কী বলিস লখা ? আমার ঠাকুরকে অপমান ! উপনন্দ । এই রং-বাট নোড়া দিয়ে তোমার মুখ গুড়িয়ে দেব না। টাকা হয়েছে বলে অহংকার। কাকে কী বলতে হয় জান না । [ সন্ন্যাসীর পশ্চাতে লক্ষেশ্বরের লুকায়ন সন্ন্যাসী । আরে কর কী ঠাকুরদা, কর কী বাবা । লক্ষেশ্বর তোমাদের চেয়ে ঢের বেশি মানুষ চেনে। যেমনি দেখেছে অমনি ধরা পড়ে গেছে। ভণ্ড সন্ন্যাস যাকে বলে । বাবা লক্ষেশ্বর, এত দেশের এত মাহুষ ভুলিয়ে এলেম, তোমাকে ভোলাতে পারলেম না । 喙 লক্ষেশ্বর । না, ঠিক ঠাওরাতে পারছি নে। হয়তো ভালো করি নি। আবার শাপ দেবে, কি, কী করবে। তিনখানা জাহাজ এখনও সমূত্রে আছে । (পায়ের ধুলা লইয়া ) প্রণাম হই ঠাকুর,—হঠাং চিনতে পারি নি। বিরূপাক্ষের মন্দিরে আমাদের ওই বিকটানন্দ বলে একটা সন্ন্যাসী আছে আমি বলি সেই ভণ্ডটাই বুঝি। ঠাকুরদা, তুমি এক কাজ করে । সন্ন্যাসী ঠাকুরকে আমার ঘরে নিয়ে যাও আমি ওঁকে কিছু ভিক্ষে দিয়ে দেব । আমি চললেম বলে । তোমরা এগোও । ঠাকুরদাদা । তোমার বড়ো দয়া। তোমার ঘরের এক মুঠ চাল নেবার জন্তে ঠাকুর সাত সিন্ধু পেরিয়ে এসেছেন । সন্ন্যাসী । বল কী ঠাকুরদা ! এক মুঠে চাল যেখানে দুর্লভ সেখান থেকে সেটি নিতে হবে বই কি । বাবা লক্ষেশ্বর, চলে তোমার ঘরে । লক্ষেশ্বর । আমি পরে যাচ্ছি, তোমরা এগোও। উপনন্দ, তুমি আগে ওঠে । ওঠে, শীঘ্র ওঠে বলছি, তোলো তোমার পুথিপত্র। উপনন্দ । আচ্ছা তবে উঠলেম, কিন্তু তোমার সঙ্গে আমার কোনো সম্বন্ধ ब्रहेण नी । r লক্ষেশ্বর। না থাকলেই যে বঁচি বাবা! আমার সম্বন্ধে কাজ কী। এত দিন তো আমার বেশ চলে যাচ্ছিল । উপনন্দ । আমি যে ঋণ স্বীকার করেছিলেম তোমার কাছে এই অপমান সহ করেই তার থেকে মুক্তি গ্রহণ করলেম। বাস চুকে গেল । [ প্রস্থান