পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঋণশোধ Ꮈ8☾ সন্ন্যাসী । কিছুমাত্র না । লোকে তাকে একটা মস্ত রাজ বলে মনে করে কিন্তু সে নিতান্তই সাধারণ মানুষের মতে । তার সাজসজ্জা দেখেই লোকে ভুলে গেছে । সোমপাল। বল কী ঠাকুর, হা হা হা হা ! আমিও তাই ঠাউরেছিলেম। জ্যা, .নিতান্তই সাধারণ মানুষ। সন্ন্যাসী । আমার ইচ্ছে আছে আমি তাকে সেইটে আচ্ছা করে বুঝিয়ে দেব। সে যে রাজার পোশাক পরে ফাকি দিয়ে অস্ত পাচ জনের চেয়ে নিজেকে মস্ত একটা কিছু বলে মনে করে আমি তার সেই ভুলটা একেবারে ঘুচিয়ে দেব। • লোমপাল । ঠাকুর, তুমি সব ফাস করে দাও। ও যে মিথ্যে রাজা, ভূয়ে রাজা, সে যেন আর ছাপা না থাকে । ওর বড়ো অহংকার হয়েছে । সন্ন্যাসী । আমি তো সেই চেষ্টাতেই আছি। তুমি নিশ্চিস্ত থাকে, যতক্ষণ না • আমার অভিপ্রায় সিদ্ধ হয় আমি সহজে ছাড়ব না । সোমপাল | প্ৰণাম | [ প্রস্থান উপনন্দের প্রবেশ উপনন্দ । ঠাকুর, আমার মনের ভার তো গেল না । সন্ন্যাসী । কী হুল বাবা । 帖 উপনন্দ । মনে করেছিলেম লক্ষেশ্বর যখন আমাকে অপমান করেছে তখন ওর কাছে আমি আর ঋণ স্বীকার করব না । তাই পুথিপত্র নিয়ে ঘরে ফিরে গিয়েছিলেম। সেখানে আমার প্রভূর বীণাটি নিয়ে তার ধুলো ঝাড়তে গিয়ে তারগুলি বেজে উঠল— অমনি আমার মনটার ভিতর যে কেমন হল সে আমি বলতে পারি নে। সেই বীণার কাছে লুটিয়ে পড়ে বুক কেটে আমার চোখের জল পড়তে লাগল। মনে হল আমার প্রভূর কাছে আমি অপরাধ করেছি। লক্ষেশ্বরের কাছে আমার প্রভু ঋণী হয়ে রইলেন আর আমি নিশ্চিম্ভ হয়ে আছি । ঠাকুর, এ তো আমার কেনোমতেই সহ হচ্ছে না। ইচ্ছে করছে আমার প্রভুর জন্তে আজ আমি অসাধ্য কিছু একটা করি । আমি তোমাকে মিথ্য বলছি নে—র্তার ঋণ শোধ করতে যদি আজ প্রাণ দিতে পারি তাহলে আমার খুব আনন্দ হবে,---মনে হবে আজকের এই সুন্দর শরতের দিন আমার পক্ষে সার্থক হল । সন্ন্যাসী। বাবা, তুমি বা বলছ সত্যই বলছ । উপনদ্ধ। ঠাকুর, ভূমি তো অনেক দেশ ঘুরেছ আমার মতে অকৰ্মণ্যকেও হাজার কার্বাপণ দিয়ে কিনতে পারেন এমন মহাত্মা কেউ আছেন ? তাহলেই খণটা শোধ হয়ে