পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঋণশোধ :8ጫ লক্ষেশ্বর। ( মাটি ও গুঞ্চপত্র সরাইয়া কোঁট বাহির করিয়া) ঠাকুর, এইটুকুর জন্তে আজ সকাল থেকে সমস্ত হিসাব কিতাৰ ফেলে রেখে এই জায়গাটার চারদিকে ভূতের মতে ঘুরে বেড়িয়েছি। এই যে গজমোতি, এ আমি তোমাকে আজ প্রথম দেখালেম । আজ পর্যন্ত কেবলই এটাকে লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়িয়েছি ; তোমাকে দেখাতে পেয়ে মনটা তৰু একটু হালকা হল । ( সন্ন্যাসীর হাতের কাছে অগ্রসর করিয়াই তাড়াতাড়ি ফিরাইয়া লইয়া ) না হল না । তোমাকে ষে এত বিশ্বাস করলেম, তবু এ জিনিস একটিবার তোমার হাতে তুলে দিই এমন শক্তি আমার নেই। এই যে আলোতে এটাকে তুলে ধরেছি আমার বুকের ভিতরে যেন গুরগুর করছে। আচ্ছা ঠাকুর, বিজয়াদিত্য কেমন লোক বলে তো । তাকে বিক্রি করতে গেলে সে তো দাম না দিয়ে এটা আমার কাছ থেকে জোর করে কেড়ে নেবে না ? আমার ওই এক মুশকিল হয়েছে । আমি এটা বেচতেও পারছি নে, রাখতেও পারছি নে, এর জন্তে আমার রাত্রে ঘুম হয় না। বিজয়াদিত্যকে তুমি বিশ্বাস কর ? সন্ন্যাসী । সব সময়ে কি তাকে বিশ্বাস করা যায় ? লক্ষেশ্বর। সেই তো মুশকিলের কথা । আমি দেখছি এটা মাটিতেই পোত থাকবে, হঠাৎ কোনদিন মরে যাব, কেউ সন্ধানও পাবে না । সন্ন্যাসী। রাজাও না, সম্রাটও না, ওই মাটিই সব ফাকি দিয়ে নেবে। তোমাকেও নেবে, আমাকেও নেবে । লক্ষেশ্বর। তা নিক গে, কিন্তু আমার কেবলই ভাবনা হয় আমি মরে গেলে কোথ। থেকে কে এসে হঠাৎ হয়তে খুড়তে খুড়তে ওটা পেয়ে যাবে। যাই হ’ক ঠাকুর, কিন্তু তোমার মুখে ওই সোনার পদ্মর কথাটা আমার কাছে বড়ো ভালো লাগল। আমার কেমন মনে হচ্ছে ওটা তুমি হয়তো খুজে বের করতে পারবে । কিন্তু তা হ’ক গে, আমি তোমার চেলা হতে পারব না । প্রণাম । [ প্রস্থান ঠাকুরদাদা ও শেখরের প্রবেশ সন্ন্যাসী । ওহে পরদেশী, তুমি তো মানুষের ভিতরকার মতলব সব দেখতে পাও । তুমি জান আমি বেরিয়েছিলুম বিশ্বের ঋণ শোধ করতে। ঠাকুরদাদা। কী ঋণ প্রভু আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন না ? সন্ন্যাসী। আনন্দের ঋণ ঠাকুরদা। শরতে যে সোনার আলোয় সুধা ঢেলে দিয়েছে—তার শোধ করতে চাই যদি তো হৃদয় ঢেলে দিতে হবে। ওহে উদাসী, তুমি বল কী ?