পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৫৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী সন্ন্যাসী। বসে, বসে, তুমি যে স্থাপিয়ে পড়েছ। একটু বিশ্রাম করে। সোমপাল। বিশ্রাম করবার সময় নেই। ঠাকুর, চরের মুখে সংবাদ পাওয়া গেল যে, বিজয়াদিত্যের পতাকা দেখা দিয়েছে—তার সৈন্যদল আসছে। সন্ন্যাসী । বল কী। বোধ হয় শরৎকালের আনন্দে তাকে আর ঘরে টিকতে । দেয় নি। তিনি রাজ্যবিস্তার করতে বেরিয়েছেন । সোমপাল । কী সর্বনাশ । রাজ্যবিস্তার করতে বেরিয়েছেন ! সন্ন্যাসী। বাবা, এতে দুঃখিত হলে চলবে কেন ? তুমিও তো রাজ্যবিস্তার করবার উদযোগে ছিলে । { সোমপাল। না, সে হল স্বতন্ত্র কথা । তাই বলে আমার এই রাজ্যটুকুতে—ত সে যাই হক, আমি তোমার শরণাগত। এই বিপদ হতে আমাকে বাচাতেই হবে, বোধ হয় কোনো দুষ্টলোক র্তার কাছে লাগিয়েছে যে আমি তাকে লঙ্ঘন করতে ইচ্ছা করেছি ; তুমি তাকে বলে সে-কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা, সর্বৈব মিথ্যা । আমি কি এমনি উন্মত্ত ? আমার রাজচক্রবর্তী হবার দরকার কী ? আমার শক্তিই বা এমন কী আছে ? 離 সন্ন্যাসী । ঠাকুরদা । ঠাকুরদাদা। কী প্রভু ? সন্ন্যাসী। দেখো, আমি গেরুয়া পরে এবং গুটিকতক ছেলেকে মাত্র নিয়ে শারদোৎসব কেমন জমিয়ে তুলেছিলেম আর ওই চক্রবর্তী সম্রাটটা তার সমস্ত সৈন্তসামন্ত নিয়ে এমন দুর্লভ উংসব কেবল নষ্টই করতে পারে। লোকটা কী-রকম দুর্ভাগা দেখেছ। সোমপাল। চুপ করে, চুপ করে ঠাকুর । কে আবার কোন দিক থেকে শুনতে পাবে । সন্ন্যাসী । ওই বিজয়াদিত্যের পরে আমার— সোমপাল। আরে চুপ, চুপ। তুমি সর্বনাশ করবে দেখছি। র্তার প্রতি তোমার মনের ভাব যাই থাক সে তুমি মনেই রেখে দাও । সন্ন্যাসী । তোমার সঙ্গে পূর্বেও তো সে-বিষয়ে কিছু আলোচনা হয়ে গেছে। সোমপাল। কী মুশকিলেই পড়লেম। সে-সব কথাকেন ঠাকুর, সে এখন থাক না । ওহে লক্ষেশ্বর, তুমি এখানে বসে বসে কী গুনছ। এখান থেকে বাও না। লক্ষেশ্বর। মহারাজ, যাই এমন আমার সাধ্য কী আছে। একেবারে পাধর দিয়ে চেপে রেখেছে। ঘমে না নড়ালে আমার আর নড়চড় নেই। নইলে মহারাজের সামনে আমি যে ইচ্ছামুখে বসে থাকি এমন আমার স্বভাবই নয়।