পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

i. রবীন্দ্র-রচনাবলী سوار اج বিশ্বাসপরায়ণ ঔদার্থগুণেই তার বাপকে কেবলই ঠকতে ও দুঃখ পেতে দেখে বাপের উপর এলার ছিল সাবাধিত মেহ–যেমন সকরুশ স্নেহ মায়ের থাকে অবুঝ বালকের পরে। সব-চেয়ে তাকে আঘাত করত যখন মায়ের কলহের ভাষায় তীব্র ইঙ্গিত থাকত যে, বুদ্ধিবিবেচনায় তিনি তার স্বামীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ । এল নানা উপলক্ষ্যে মায়ের কাছে তার । বাবার অসম্মান দেখতে পেয়েছে, তা নিয়ে নিষ্ফল আক্রোশে চোখের জলে রাত্রে তার বালিশ গেছে ভিজে । এ-রকম অতিমাত্র , ধৈর্য অন্যায় বলে এল অনেক সময় তার বাবাকে মনে মনে অপরাধী না করে থাকতে পারে নি । অত্যন্ত পীড়িত হয়ে একদিন এলা বাবাকে বলেছিল, “এ-রকম অন্যায় চুপ করে সহ করাই অন্যায়।” 粤= নরেশ বললেন, “স্বভাবের প্রতিবাদ করাও যা আর তপ্ত লোহার হাত বুলিয়ে তাকে ঠাণ্ড করতে যাওয়াও তাই, তাতে বীরত্ব থাকতে পারে কিন্তু আরাম নেই।” “চুপ করে থাকাতে আরাম আরও কম”—বলে এল দ্রুত চলে গেল। এদিকে সংসারে এলা দেখতে পায়, যার মায়ের মন জুগিয়ে চলবার কৌশল জানে তাদের চক্রাস্তে নিষ্ঠুর অন্যায় ঘটে অপরাধহীনের প্রতি । এল সইতে পারে না, উত্তেজিত হয়ে সত্য প্রমাণ উপস্থিত করে বিচারকত্রীর সামনে । কিন্তু কর্তৃত্বের অহমিকার কাছে অকাট্য যুক্তিই দুঃসহ স্পর্ধা । অমুকুল ঝড়ো হাওয়ার মতো তাতে বিচারের নৌকো এগিয়ে দেয় না, নৌকো দেয় কাত করে। এই পরিবারে আরও একটি উপসর্গ ছিল যা এলার মনকে নিয়ত আঘাত করেছে। সে তার মায়ের গুচিবায়ু একদিন কোনো মুসলমান অভ্যাগতকে বসবার জন্তে এলা মাছুর পেতে দিয়েছিল—সে মাদুর মা ফেলে দিলেন, গালচে দিলে দোষ হত না । এলার তার্কিক মন, তর্ক না করে থাকতে পারে না । বাবাকে একদিন জিজ্ঞাসা করলে, “আচ্ছ এই সব ছোয়াছুয়ি নওয়াখাওয়া নিয়ে কটকেন মেয়েদেরই কেন এত পেয়ে বসে ? এতে হৃদয়ের তো স্থান নেই, বরং বিরুদ্ধতা আছে ; এ তো কেবল যন্ত্রের মতো অন্ধভাবে মেনে চলা ।” সাইকলজিস্ট বাবা বললেন, “মেয়েদের হাজার বছরের হাতকড়ি-লাগানো মন ; তারা মানবে, প্রশ্ন করবে না,—এইটেতেই সমাজ-মনিবের কাছে বকশিশ পেয়েছে, সেইজন্তে মানাটা যত বেশি অঙ্গ হয় তার দাম তাদের কাছে তত বড়ো হয়ে ওঠে । মেয়েলি পুরুষদেরও এই দর্শী।” আচারের নিরর্থকতা সম্বন্ধে এলা বারবার মাকে প্রশ্ন না করে থাকতে পারে নি, বারবার তার উত্তর পেয়েছে ভংগনায়। নিয়ত এই ধাক্কায় এলার মন অবাধ্যতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। 嘯 নরেশ দেখলেন পারিবারিক এই সব জনে মেয়ের শরীর খারাপ হয়ে উঠছে, সেট