পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম অধ্যায় দৃশু-চায়ের দোকান। তারই একপাশে একটি ছোটাে ঘর। সেই ঘরে বিক্রির. জন্যে সাজানে কিছু স্কুলকালেজপাঠ্য বই, অনেকগুলিই সেকেগুহাগু। কিছু আছে যুরোপীয় আধুনিক গল্প-নাটকের ইংরেজি তর্জম। সেগুলো অল্পবিত্ত ছেলের পাত উলটিয়ে পড়ে চলে যায়, দোকানদার আপত্তি করে না । স্বত্বাধিকারী কানাই গুপ্ত, পুলিসের পেনশনভোগী সাবেক সাব-ইনস্পেক্টর। (" সামনে সদর রাস্তা, বা পাশ দিয়ে গেছে গলি। যারা নিভৃতে চা খেতে চায় তাদের জন্যে ঘরের এক অংশ ছিন্নপ্রায় চটের পর্দা দিয়ে ভাগ করা । আজ সেইদিকটাতে একটা বিশেষ আয়োজনের লক্ষণ। যথেষ্ট পরিমাণ টুলচৌকির অসম্ভাব পূরণ করেছে দাৰ্জিলিং চা কোম্পানির মার্ক-মারা প্যাকবাক্স। চায়ের পাত্রেও অগত্যা বৈসাদৃত, তাদের কতকগুলি নীলরঙের এনামেলের, কতকগুলি সাদা চীনামাটির । টেবিলে হাতলভাঙা দুধের জগে ফুলের তোড়া । বেলা প্রায় তিনটে । ছেলেরা এলালতাকে নিমন্ত্রণের সময় নির্দেশ করে দিয়েছিল ঠিক আড়াইটায়। বলেছিল, এক মিনিট পিছিয়ে এলে চলবে না। অসময়ে নিমন্ত্রণ, যেহেতু ঐ সময়টাতেই দোকান শূন্ত থাকে। চা-পিপাসুর ভিড় লাগে সাড়ে চারটার পর থেকে। এলা ঠিক সময়েই উপস্থিত। কোথাও ছেলেদের একজনেরও দেখা নেই। একলা বসে তাই ভাবছিল—তবে কি গুনতে তারিখের ভুল হয়েছে। এমন সময় ইন্দ্রনাথকে ঘরে ঢুকতে দেখে চমকে উঠল। এ-জায়গায় তাকে কোনোমতেই আশা कद्रां शीघ्रं न ! ইন্দ্রনাথ যুরোপে কাটিয়েছেন অনেক দিন, বিশেষ খ্যাতি পেয়েছেন সায়াঙ্গে । যথেষ্ট উচুপদে প্রবেশের অধিকার তার ছিল ; যুরোপীয় অধ্যাপকদের প্রশংসাপত্র ছিল উদার ভাষায় । যুরোপে থাকতে ভারতীয় কোনো একজন পোলিটিক্যাল বদনামির সঙ্গে তার কদাচিৎ দেখাসাক্ষাৎ হয়েছিল, দেশে ফিরে এলে তারই লাঞ্ছনা র্তাকে সকল কর্মে বাধা দিতে লাগল। অবশেষে ইংলণ্ডের খ্যাতনামা কোনো বিজ্ঞান-আচার্ষের বিশেষ সুপারিশে অধ্যাপনার কাজ পেয়েছিলেন, কিন্তু সে কাজ অযোগ্য অধিনায়কের অধীনে। অযোগ্যতার সঙ্গে ঈর্ষ থাকে প্রখর, তাই তার বৈজ্ঞানিক গবেষণার চেষ্টা উপরওআলার হাত থেকে ব্যাঘাত পেতে লাগল পদে পদে । শেষে এমন জায়গায় তাকে বদলি হতে হল যেখানে ল্যাবরেটরি নেই।