পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ኟዓ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী “আপনি যা লিখেছেন সেটা যে একেবারেই আমার কথা হতে পারে না তা আমি বলব না। এই সর্বনেশে ছেলেগুলোকে আমি ভালোবাসি—অমন ছেলে আছে কোথায় ! একদিন ওদের সঙ্গে কলেজে পড়েছি। প্রথম প্রথম ওরা আমার নামে বোর্ডে লিখেছে ৰা-তা—পিছন থেকে ছোটাে এলাচ বলে চেচিয়ে ডেকেই ভালোমাযের মতে, আকাশের দিকে তাকিয়েছে। ফোর্থ ইয়ারে পড়ত আমার বন্ধু ইন্দ্ৰাণী—তাকে বলত বড়ে এলাচ, সে-বেচারার বহরে কিছু বাহুল্য ছিল, রংটাও উজ্জল ছিল না। এই সব ছোটোখাটো উৎপাত নিয়ে অনেক মেয়ে রাগারগি করত, আমি কিন্তু ছেলেদের পক্ষ নিয়েছি। আমি জানতুম, আমরা ওদের চোখে অনভ্যস্ত তাই ওদের ব্যবহারটা হয়ে পড়ে এলোমেলো-কদর্যও হয় কখনো কখনো, কিন্তু সেটা ওদের স্বাভাবিক নয়। যখন অভ্যেস হয়ে গেল, সুর আপনি এল সহজ হয়ে । ছোটো এলাচ হল এলাদি । মাঝে মাঝে কারও সুরে মধুর রস লেগেছে—কেনই বা লাগবে না ? আমি কখনো ভয় করি নি তা নিয়ে । আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি ছেলেদের সঙ্গে ব্যবহার করা খুবই সহজ, মেয়েরা জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে যদি ওদের মৃগয়া করবার দিকে ঝোক না দেয়। তার পরে একে একে দেখলুম ওদের মধ্যে সব-চেয়ে ভালো যারা, যাদের ইতরতা নেই, মেয়েদের পরে সম্মান যাদের পুরুষের যোগ্য—” “অর্থাৎ কলকাতার রসিক ছেলেদের মতো যাদের রস গাজিয়ে-ওঠা নয়—” “ই তারাই, ছুটল মৃত্যুদূতের পিছন পিছন মরিয়া হয়ে, তারা প্রায় সবাই আমারই মতো বাঙাল। ওরাই যদি মরতে ছোটে আমি চাই নে ঘরের কোণে বেঁচে থাকতে। কিন্তু দেখুন মাস্টারমশায়, সত্যি কথা বলব। যতই দিন যাচ্ছে, আমাদের উদ্দেশুটা উদ্দেশু না হয়ে নেশা হয়ে উঠছে। আমাদের কাজের পদ্ধতি চলেছে যেন নিজের বেতাল কোকে বিচারশক্তির বাইরে। ভালো লাগছে না। অমন সব ছেলেদের কোন অন্ধশক্তির কাছে বলি দেওয়া হচ্ছে! আমার বুক ফেটে যায়।” “বংসে, এই যে ধিক্কার এটাই কুরুক্ষেত্রের উপক্রমণিকা । অৰ্জুনের মনেও ক্ষোভ লেগেছিল। ডাক্তারি শেখবার গোড়ায় মড় কাটবার সময় স্থণায় প্রায় মূৰ্ছ গিয়েছিলুম। ওই ঘূণাটাই ঘূণ্য। শক্তির গোড়ায় নিরের সাধন, শেষে হয়তে ক্ষম। তোমরা বলে থাক—মেয়ের মায়ের জাত, কথাটা গৌরবের নয়। মা তো প্রকৃতির হাতে স্বতই বানানো । জন্তুজানোয়াররাও বাদ যায় না। তার চেয়ে বড়ো কৰা তোমরা শক্তিরূপিণী, এইটেকেই প্রমাণ করতে হবে দয়ামায়ার জলাজমি পেরিয়ে গিয়ে শক্ত ভাঙায়। শক্তি দাও, পুরুষকে শক্তি দাও।” * *