পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় অধ্যায় এলা বলে আছে কেদারায়, পিঠে বালিশ গোজা । লিখছে একমনে। পায়ের উপর পা তোলা। দেশবন্ধুর মূর্তি-আঁকা খাত কাঠের বোর্ডে কোলের উপর আড় করে ধর । দিন ফুরোতে দেরি নেই, কিন্তু তখনও চুল রয়েছে অযত্নে । বেগনি রঙের খন্দরের শাড়ি গায়ে, সেটাতে মলিনতা অব্যক্ত থাকে, তাই নিভৃতে ব্যবহারে তার অনাদৃত প্রয়োজন। এৈলার হাতে একজোড়া লালরং-করা শাখা, গলায় একছড়া সোনার হার । হাতির দাতের মতে গৌরবর্ণ শরীরটি টিলাট ; মনে হয় বয়স খুব কম কিন্তু মুখে পরিণত বুদ্ধির গাম্ভীর্ষ। খন্দরের সবুজ রঙের চাদরে ঢাকা সংকীর্ণ লোহার খাট ঘরের প্রান্তে দেয়াল-ঘেঁষা। নারায়ণী স্কুলের তাতে-বোন শতরঞ্চ মেঝের উপর পাতা। একধারে লেখবার ছোটো টেবিলে ব্লটিং প্যাড ; তার একপাশে কলম-পেনসিল সাজানো দোয়াতদান, অন্যধারে পিতলের ঘটতে গন্ধরাজ ফুল । দেয়ালে ঝুলছে কোনো একটি দূরবর্তী কালের ফোটোগ্রাফের প্রেতাত্মা, ক্ষীণ হলদে রেখায় বিলীনপ্রায়। অন্ধকার হল, আলো জালবার সময় এসেছে। উঠি-উঠি করছে এমন সময় খন্দরের পর্দাটা সরিয়ে দিয়ে অতীন্দ্র দমকা হাওয়ার মতো ঘরে ঢুকেই ডাক দিল, “এলী।” এলা খুশিতে চমকে উঠে বললে, “অসভ্য, জানান না দিয়ে এ ঘরে আসতে সাহস কর।” এলার পায়ের কাছে ধপ করে মেঝের উপর বসে অতীন বললে, “জীবনটা অতি ছোটো, কায়দাকাঙ্কন অতি দীর্ঘ, নিয়ম বাচিয়ে চলবার উপযুক্ত পরমায়ু ছিল সনাতন যুগে মাদ্ধাতার। কলিকালে তার টানাটানি পড়েছে।” । “আমার কাপড় ছাড়া হয় নি এখনও।” “ভালোই। তাহলে আমার সঙ্গে মিশ ধাবে। তুমি থাকবে রখে, আমি থাকব পদাতিক হয়ে—এ-রকম দ্বন্ধ মন্থর নিয়মে অধৰ্ম। এককালে আমি ছিলুম নিখুঁত ভদ্রলোক, খোলসটা তুমিই দিয়েছ ঘুচিয়ে। বর্তমান বেশভূষাটা দেখছ কী ब्रकम ?” “অভিধানে ওকে বেশভূষা বলে না।” “কী বলে তবে ?” “শৰ পাচ্ছি নে খুজে। বোধ হয় ভাষায় নেই। জামার সামনেটাতেই ওই ষে বঁকাচোর ছেড়ার দাগ, ও কি তোমার স্বকৃত সেলাইয়ের লম্বা বিজ্ঞাপন ?” o