পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী فSbb

  • ভাগ্যের আঘাত দারুণ হলেও বুক পেতেই নিয়ে থাকি—ওটা তারই পরিচয় । এ জামা দরজিকে দিতে সাহস হয় না, তার তো আত্মসম্মানবোধ আছে।”

“আমাকে দিলে না কেন ?” “নব যুগের সংস্কারভার নিয়েছ, তার উপরে পুরোনো জামার সংস্কার ?” 聯。 “ওটাকে সহ করবার এমনই কী দরকার ছিল ?” “যে দরকারে ভদ্রলোক তার স্ত্রীকে সহ করে।” “তার অর্থ ?” “তার অর্থ, একটির বেশি নেই বলে ।” “কী বল তুমি অস্তু! বিশ্বসংসারে তোমার ওই একটি বই জামা আর নেই?" “বাড়িয়ে বলা অন্যায়, তাই কমিয়ে বললুম। পূর্ব আশ্রমে শ্ৰীযুক্ত অতীন্দ্রবাবুর জামা ছিল বহুসংখ্যক ও বহুবিধ। এমন সময়ে দেশে এল বস্তা। তুমি বক্তৃতায় বললে, যে অশ্রশ্লাবিত দুর্দিনে, ( মনে আছে অশ্রুপ্রাবিত বিশেষণটা ? ) বহু নরনারীর লজ্জা রক্ষার মতো কাপড় জুটছে না, সে সময়ে আবগুকের অতিরিক্ত কাপড় যার আছে লজ তারই। বেশ গুছিয়ে বলেছিলে। তখনও তোমার সম্বন্ধে প্রকাস্তে হাসতে সাহস ছিল না। মনে মনে হেসেছিলুম। নিশ্চিত জানতুম আবশ্বকের বেশি জামা ছিল তোমার বাক্সে। কিন্তু মেয়েদের পঞ্চাশ রঙের পঞ্চাশটা জামা থাকলেও পঞ্চাশটাই অত্যাবগুক । সেদিন দেশহিতৈষিণীদের মধ্যে রেষারেষি চলছিল,—কে কত দান সংগ্রহ করতে পারে। এনে দিলুম আমার কাপড়ের তোরঙ্গ তোমার চরণতলে । হাততালি দিয়ে উঠলে খুশিতে।” “সে কী কথা ! আমি কি জানি অমন নিঃশেষ করে দেবে ?” “আশ্চর্য হও কেন ? দুঃসাধ্য ক্ষতিসাধনের শক্তি এই দেহে দুর্জয়বেগে সঞ্চার করলে কে? সংগ্রহের ভার যদি থাকত আমাদের গণেশ মজুমদারের পরে তাহলে তার পৌরুষ আমার কাপড়ের বাক্সে ক্ষতি করত অতি সামান্ত ।” “ছি ছি অস্তু, কেন আমাকে বললে না ?” “দুঃখ করে না। একান্ত শোচনীয় নয়, দুটাে জামা রাঙিয়ে রেখে দিলুম নিত্য আবগুকের গরজে, পালা করে কেচে পরা চলছে। আরও দুটো আছে আপদ্ধর্মের জন্যে ভাজ করা। যদি কোনোদিন সন্দিগ্ধ সংসারে ভদ্রবংশীয় বলে প্রমাণ দেবার প্রয়োজন ঘটে সেই জামা দুটোতে ধোবা-দরজির সার্টিফিকেট রইল।” “স্বষ্টিকর্তার সার্টিফিকেট রয়েছে ওই চেহারাতেই—সাক্ষী ডাকতে হবে না তোমার *