পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శివా8 রবীন্দ্র-রচনাবলী “আচ্ছা, অখিল যা তোর ছুটি ।” দ্বিতীয় কথাটি না বলে অধিল দৌড়ে চলে গেল। অতীন বললে, “ওকে পোষ মানাতে পারলুম না। আমার সাবেক সম্পত্তির ঝড়তিপড়তির মধ্যে ছিল একটা কবজিঘড়ি, আধুনিক ছেলেদের পক্ষে সাত রাজারধন। একদিন সেট ওকে দিতে গিয়েছিলুম। মাথা ঝাকানি দিয়ে চলে গেল। এর থেকে বুঝবে ওতে আমাতে ব্যাপারটা কমু্যন্তাল হয়ে উঠেছে, অস্তু-অধিল রায়ট হবার লক্ষণ ।” * “ছেলেদের সঙ্গে ভাব করতে তোমার জুড়ি কেউ নেই, তবু এই বঁদেরটার কাছে হার মানলে কেন ?” “মাঝখানে আছে তৃতীয় পক্ষ, নইলে ওতে আমাতে হরিহর বনে যে তুম। ধাক সে-কথা ; এখন বলো, তোমার কৈফিয়তটা কী ? কেন আমাকে সরিয়ে রাখলে ?” “একটা সোজা কথা কেন তুমি মনে রাখ না ষে, তোমার চেয়ে আমি বয়সে বড়ো ?” “কারণ এই সোজা কথাটা ভুলতে পারি নি যে, তোমার বয়স আটাশ, আমার বয়স আটাশ পেরিয়ে কয়েক মাস। প্রমাণ করা খুব সহজ, কারণ দলিলট তাম্রশাসনে ব্রাহ্মীলিপিতে লেখা নয় ।” “আমার আটাশ তোমার আটাশকে বহুদূরে পেরিয়ে গেছে। তোমার আটাশে যৌবনের সব দলতেই নিধুম জলছে। এখনও তোমার জানলা খোলা যাদের দিকে, তারা অনাগত তারা অভাবিত । “এলী, আমার কথাটা কিছুতে বুঝতে চাচ্ছ না বলেই বুঝছ না। দলের কাছে ভগবানের সত্যের বিরুদ্ধে সত্য নিয়েছ তাই নানা তর্ক বানিয়ে নিজেকে ভোলাচ্ছ, আমাকেও । ভোলাও কিন্তু এ-কথা ব'লো না আমার জীবনে এখনও অনাগত অভাবিত দূরে রয়ে গেছে। এসেছে সে, সে তুমি । তবুও আজও সে অনাগত । চিরদিনই কি তবে জানলা খোলা থাকবে তার দিকে ? সেই শূন্তের ভিতর দিয়ে কেবলই বাজবে আমার আর্ত সুর, চাই তোমাকে চাই, আর অন্ত দিক দিয়ে ফিরে আসবে না কোনো উত্তর ?” “ফিরে আসছে না, এমন কথা বলছ কী করে অকৃতজ্ঞ ? চাই, চাই, চাই, তোমার চেয়ে বেশি কিছুই চাই নে এ জগতে। ষে-সময়ে দেখা হলে শুভদৃষ্টি সম্পূর্ণ হত সে-সময়ে হয় নি যে দেখা । কিন্তু তবু বলছি ভাগ্যে হয় নি।” “কেন ? কী ক্ষতি হত তাতে ?”