পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“বারণ মানতে হয়। শুধু তাই কি ? কী হবে সব কথা বলে –আলো কমে গিয়েছে, এল আরও কাছে এস। আমার চোখ দুটাে এসেছে ছুটির দরবারে তোমার কাছে । একমাত্র তোমার কাছেই আমার ছুটি । অতি ছোটো তার আয়তন, সোনার জলে রাঙানো ফ্রেমের মতো । তারই মধ্যে ছবিটিকে বধিয়ে নিই নে কেন ? ওই ড়ে তোমার দুই-একগুছি অশিষ্ট চুল আলগা হয়ে চোখের উপর এসে পড়েছে, ত্রুত হাতে তুলে তুলে দিচ্ছ, কালো পাড়-দেওয়া তসরের শাড়ি, ব্রোচ নেই কাধে, আচলটা মাথার চুলে বিধিয়ে রাখা, চোখে ক্লান্ত ক্লেশের ছায়া, ঠোঁটে মিনতির আভাস, চারিদিকে দিনের আলো ডুবে এসেছে শেষ অস্পষ্টতায়। এই যা দেখছি এইটিই আশ্চর্য সত্য, এর মানে কী, কাউকে বুঝিয়ে বলতে পারব না, কোনো এক অদ্বিতীয় কবির হাতেই ধরা দিতে পারল না বলে এর অব্যক্ত মাধুর্ষের মধ্যে এত গভীর বিষাদ । এই ছোটো একটি অপরূপ পরিপূর্ণতাকে চারদিকে ভ্ৰকুট করে ঘিরে আছে বড়োনামওআলা বড়োছায়াওআলা বিকৃতি ।” “কী বলছ, অন্তু ” “অনেকখানি মিথ্যে । মনে পড়ছে কুলি-বসতিতে আমাকে বাসা নিতে বলেছিলে । তোমার মনের মধ্যে ছিল আমার বংশের অভিমানকে ধূলিসাং করবার অভিপ্রায় । তোমার সেই সুমহং অধ্যবসায়ে আমার মজা লাগল। ডিমক্রাটিক পিকনিকে নাবা গেল। গাড়োয়ান-পাড়াতে ঘুরলুম। দাদা-খুড়োর সম্পর্ক পাতিয়ে চললুম বহুবিধ মোষের গোয়ালঘরের পাশে পাশে । কিন্তু তাদেরও বুঝতে বাকি ছিল না, আমারও নয় যে এই সম্পর্কের ছাপগুলো ধোপ সইবে না। নিশ্চয় এমন মহং লোক আছেন সব যন্ত্রেই যাদের মুর বাজে, এমন কি, তুলো-ধোনা যন্ত্রেও। আমরা নকল করতে গেলে সুর মেলে না । দেখে নি তোমাদের পাড়ার খ্ৰীস্টশিস্যকে; ব্রাদার বলে যাকে-তাকে বুকে চেপে ধরা তার অনুষ্ঠানের অঙ্গ। এতে খ্ৰীস্টকে ব্যঙ্গ করা হয়।” “কী হয়েছে তোমার অন্তু ! কোন ক্ষোভের মুখে এ-সব কথা বলছ ? তুমি কি বলতে চাও কর্তব্যকে কর্তব্য বলে মানা যায় না অরুচি কাটিয়ে দিয়েও ” “রুচির কথা হচ্ছে না এলী, স্বভাবের কথা। প্রকৃষ্ণ অর্জুনকে বীরের কর্তব্যই করতে বলেছিলেন অত্যন্ত অরুচি সত্বেও ; কুরুক্ষেত্র চাষ করবার উদ্দেশে এগ্রিকালচারাল ইকনমিক্স চর্চা করতে বলেন নি।” “শ্ৰীকৃষ্ণ তোমাকে হলে কী বলতেন, অন্তু ” । “অনেকদিন আগেই কানে কানে বলে রেখেছেন। সেই তার কানে-কানে কথাটাকে মুখ খুলে বলবার ভার ছিল আমার পরে। নির্বিচারে সবারই একই কর্তব্য,