পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●>ぐり রবীন্দ্র-রচনাবলী শোচনীয় হয়ে ওঠে। রোগ সব শরীরেই দুঃখের কিন্তু ক্ষীণ শরীরে মারাত্মক । মন্থন্তত্বের অপমান করেও কিছুদিনের মতো জয়ডঙ্কা বাজিয়ে চলতে পারে তারা যাদের আছে বাহুবল, কিন্তু আমরা পারব না। আগাগোড় কলম্বে কালো হয়ে পরাভবের শেষসীমায় অখ্যাতির অন্ধকারে মিশিয়ে যাব আমরা ।” معمہ “কিছুকাল থেকে এই ভয়ংকর ট্র্যাজেডির চেহারা আমার কাছেও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে অস্তু। গৌরবের আহবানে নেমেছিলেম কিন্তু লজ্জা বেড়ে উঠছে প্রতিদিন। এখন আমরা কী করতে পারি বলে আমাকে ।” “সব মানুষের সামনেই ধর্মক্ষেত্রে ধর্মযুদ্ধ আছে, সেখানে মৃতে বাপি তেন লোকত্ৰয়ং জিতং । কিন্তু অন্তত আমাদের কজনের জন্যে এ-যাত্রায় সে-ক্ষেত্রের পথ বন্ধ । এখানকার কর্মফল এখানেই নিঃশেষে চুকিয়ে দিয়ে যেতে হবে।” “সব বুঝতে পারছি, তবু অন্তু আমাদের দেশের কাজ নিয়ে কিছুদিন থেকে এমন কঠিন ধিক্কার দিয়ে তুমি কথা বল, সে আমাকে বড়ো বাজে ।” “তার কারণ কী সে-কথা এখন আর না বললেও হয়, সময় চলে গেছে।” “তবু বলে ।” “আমি আজ স্বীকার করব তোমার কাছে,—তোমরা যাকে পেটি য়ট বলে আমি সেই পেট্টিয়ট নই। পেটিয়টিজমের চেয়ে যা বড়ো তাকে যারা সর্বোচ্চ না মানে তাদের পেটিয়টিজম কুমিরের পিঠে চড়ে পার হবার খেয়ানৌকো। মিথ্যাচরণ, নীচতা, পরস্পরকে অবিশ্বাস, ক্ষমতালাভের চক্রান্ত, গুপ্তচরবৃত্তি একদিন তাদের টেনে নিয়ে যাবে পাকের তলায়। এ আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। এই গর্তর ভিতরকার কুত্ৰ জগংটার মধ্যে দিনরাত মিথ্যের বিষাক্ত হাওয়ায় কখনোই নিজের স্বভাবে সেই পৌরুষকে রক্ষা করতে পারব না যাতে পৃথিবীতে কোনো বড়ো কাজ করতে পারা যায়।”

  • আচ্ছা অস্তু, তুমি যাকে আত্মঘাত বল সে কি কেবল আমাদেরই দেশে ?” “তা বলি নে । দেশের আত্মাকে মেরে দেশের প্রাণ বাচিয়ে তোলা যায় এই ভয়ংকর মিথ্যে কথা পৃথিবীমৃদ্ধ ন্যাশনালিস্ট আজকাল পাশবগর্জনে ঘোষণা করতে বসেছে, তার প্রতিবাদ আমার বুকের মধ্যে,অসহ আবেগে শুমরে গুমরে উঠছে—এই কথা সত্যভাষায় হয়তে বলতে পারতুম, মুরজের মধ্যে লুকোচুরি করে দেশ-উদ্ধারচেষ্টার চেয়ে সেটা হত চিরকালের বড়ো কথা । কিন্তু এ-জন্মের মতো বলবার সময় হল না । আমার বেদন তাই আজ এত নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে।”

এলা গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ফেললে, বললে, “ফিরে এস অভ ।” ஸ்: *আর কেরবার পথ নেই।” n