পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|9షా8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ভাবছি এইবার উপসংহার, এমন সময় সতু খামক তর্ক তুললে, মাছুষ জন্মায় জন্মদিনে না জন্মতিথিতে ? যত বলি খামো সে থামে না। তর্কের মধ্যে দেশাত্মবোধের বীজ লাগল, চড়তে লাগল গলার আওয়াজ, বন্ধুবিচ্ছেদ হয় আর কি। বিষম রাগ হল তোমার উপরে। আমার জন্মদিনকে একটা সামান্ত উপলক্ষ্য করেছিলে, মহত্তর লক্ষ্য ছিল কর্মভাইদের একত্র করা ।” . جمیئے “কোনটা লক্ষ্য কোনটা উপলক্ষ্য বাইরে থেকে বিচার ক’রে না অস্তু। শাস্তির যোগ্য আমি, কিন্তু অন্যায় শাস্তির না । মনে নেই তোমার, সেইবারকার জন্মদিনেই অতীন্দ্রবাবু আমার মুখে নাম নিলেন অন্তু ? সেটা তো খুব ছোটো কথা নয় । তোমাক্স অন্ত নামের ইতিহাসটা বলে শুনি ।” “সখী, তবে শ্রবণ করে । তখন বয়স আমার চার-পাচ বছর, মাথায় ছিলুম ছোটো, কথা ছিল না মুখে, শুনেছি বোকার মতো ছিল চোখের চাহনি। জ্যেঠামশায় পশ্চিম থেকে এসে আমাকে প্রথম দেখলেন। কোলে তুলে নিলেন, বললেন, এই বালখিল্যটার নাম অতীন্দ্র রেখেছে কে ? অতিশয়োক্তি অলংকার, এর নাম দাও অনতীন্দ্র । সেই অনতি শব্দটা স্নেহের কণ্ঠে অন্তু হয়ে দাড়িয়েছে। তোমার কাছেও একদিন অতি হয়েছে অনতি, ইচ্ছে করে খুইয়েছে মান ।” হঠাৎ অতীন চমকে উঠে থেমে গেল । বললে, “পায়ের শব্দ শুনছি যেন i” এলা বললে, “অখিল ।” আওয়াজ এল, “দিদিমণি ।” ছাদে আসবার দরজা খুলে দিয়ে এল জিজ্ঞাসা করলে, “কী ।” অখিল বললে, ”খাবার।” বাড়িতে রান্নার ব্যবস্থা নেই। অদূরবর্তী দিশি রেলটোর থেকে বরাদ্দমত খাবার দিয়ে যায় । এলা বললে, “অন্ত, চলে খেতে ।” “খাওয়ার কথা বলে না । না খেয়ে মরতে মাছুষের অনেকদিন লাগে । নইলে ভারতবর্ব টকত না । ভাই অধিল, আর রাগ রেখো না মনে। আমার ভাগটা তুমিই খেয়ে নাও। তার পরে পলায়নেন সমাপয়েৎ—দৌড় দিয়ে ষত পার।” অখিল চলে গেল । দুজনে ছাদের মেঝের উপর বসল। অতীন আবার শুরু করলে। “সেদিনকার জন্মদিন চলতে লাগল একটানা, কেউ নড়বার নাম করে না । আমি ঘন ঘন ঘড়ি দেখছি, ওটা একটা ইঙ্গিত রাতকানাদের কাছে। শেষকালে তোমাকে বললুম,