পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৩ রবীন্দ্র-রচনাবলী “বলে না, কে এসেছে। আমার ভালো লাগছে না ।” “থাক্ সে-কথা, যা বলছিলুম বলতে দাও।” “অস্তু, কিছুতেই মন দিতে পারছি নে ৷” 懶 “এল, শেষ করতে দাও আমার কাহিনী। বেশি দেরি নেই।--তুমি উঠে এলে ছাদে। মৃদ্ধগন্ধ পেলুম রজনীগন্ধার। ফুলের গুচ্ছটি সবার কাছ থেকে লুকিয়ে একলা আমার হাতে দেবে বলে। আমাদের সম্বন্ধের ক্ষেত্রে অস্তুর জীবনলীলা শুরু হল এই লাজুক ফুলের গোপন অভ্যর্থনায়, তার পর থেকে অতীন্দ্রনাথের বিদ্যাবুদ্ধি গাম্ভীর্য ক্রমে ক্রমে তলিয়ে গেল অতলস্পর্শ আত্মবিশ্বতিতে। সেইদিন প্রথম তুমি. আমার গলা জড়িয়ে ধরলে, বললে, এই নাও জন্মদিনের উপহার-—সেই পেয়েছি প্রথম চুম্বন। আজ দাবি করতে এসেছি শেষ চুম্বনের।” অখিল এসে বললে, “বাৰুটি দরজায় ধাক্কা মারতে শুরু করেছে। ভাঙল বুঝি। বলছে, জরুরি কথা ।” “ভয় নেই অখিল, দরজা ভাঙবার আগেই তাকে ঠাণ্ড করব । বাবুকে ওইখানেই অনাথ করে রেখে তুমি এখনই পালাও অন্য ঠিকানায়। আমি আছি এলাদির খবর নিতে।” এলা অখিলকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে তার মাথায় চুমে খেয়ে বললে, “সোনা আমার, লক্ষ্মী আমার, ভাই আমার, তুই চলে যা । তোর জন্যে কখানা নোট আমার আঁচলে বেঁধে রেখেছি, তোর এলাদির আশীৰ্বাদ । আমার পা দুয়ে বল, এখনই তুই যাবি, দেরি করবি নে।” 甲 .. অতীন বললে, “অখিল আমার একটি পরামর্শ তোমাকে শুনতেই হবে। যদি তোমাকে কখনো কোনো প্রশ্ন কেউ জিজ্ঞাসা করে তুমি ঠিক কথাই বলবে। ব’লে এই রাত এগারোটার সময় আমিই তোমাকে জোর করে এ-বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। চলো কথাটাকে সত্য করে আসি ।” এল আর-একবার অখিলকে কাছে টেনে নিয়ে বললে, “আমার জন্তে ভাবিস নে ভাই । তোর অস্তুদ রইল, কোনো ভয় নেই।” & অগিলকে যখন ঠেলে নিয়ে অতীন চলেছে এলা বললে, “আমিও যাই তোমার সঙ্গে डास्लु !” আদেশের স্বরে অতীন বললে, “না, কিছুতেই না ।” ছাদের ছোটো পাচিলটার উপর বুক চেপে ধরে এল দাড়িয়ে রইল—কণ্ঠের কাছে গুমরে ওমরে উঠতে লাগল কান্না, বুঝলে আজ রাত্রে ওর কাছ থেকে চিরকালের মতো অখিল গেল চলে।