পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধর্ম මේ8` দিন ও রাত্রি স্বর্য অস্ত গিয়াছে। অন্ধকার অবগুণ্ঠনের অন্তরালে সন্ধ্যার সীমস্তের শেষ স্বর্ণলেখাটুকু অন্তৰ্হিত হইয়াছে। রাত্রিকাল আসন্ন । এই যে, দিন এবং রাত্রি প্রত্যহই আমাদের জীবনকে একবার আলোকে একবার অন্ধকারে তালে তালে আঘাত করিয়া যাইতেছে, ইহারা আমাদের চিত্তবীণায় কী রাগিণী ধ্বনিত করিয়া তুলিতেছে ? এইরূপে প্রতিদিন আমাদের মধ্যে ষে এক অপরূপ ছন্দ রচিত হইতেছে, তাহার মধ্যে কি কোনো বৃহৎ অর্থ নাই ? আমরা এই ষে অনস্ত গগনতলের নাড়িম্পন্দনের ন্যায় দিনরাত্রির নিয়মিত উত্থানপতনের অভিঘাতের মধ্যে বাড়িয়া উঠিতেছি, আমাদের জীবনের মধ্যে এই আলোক-অন্ধকারের নিত্য গতিবিধির একটা তাৎপর্য কি গ্রথিত হইয়া যাইতেছে না ? তটভূমির উপরে প্রতি বর্ষায় যে একটা জলপ্লাবন বহিয়া যাইতেছে এবং তাহার পরে শরৎকালে সে আবার জল হইতে জাগিয়াউঠিয়া শস্তবপনের জন্য প্রস্তুত হইতেছে—এই বর্ষ ও শরতের গতায়াত তটভূমির স্তরে স্তরে কি নিজের ইতিহাস রাখিয়া যায় না ? দিনের পর এই যে রাত্রির অবতরণ, রাত্রির পর এই যে দিনের অভু্যদয়, ইহার পরম বিস্ময়করত হইতে আমরা চিরাভ্যাসবশত যেন বঞ্চিত না হই। সূর্ব একসময়ে হঠাৎ আকাশতলে তাহার আলোকের পুথি বন্ধ করিয়া দিয়া চলিয়া যায়—রাত্রি নিঃশাকরে আর-একটি নূতন গ্রন্থের নূতন অধ্যায় বিশ্বলোকের সহস্ৰ অনিমেষনেত্রের সম্মুখে উদঘাটিত করিয়া দেয়, ইহা আমাদের পক্ষে সামান্য ব্যাপার নহে। এই অল্পকালের পরিবর্তন কী বিপুল, কী আশ্চর্ষ। কী অনায়াসে মুহূর্তকালের মধ্যেই বিশ্বসংসার ভাব হইতে ভাবাস্তরে পদার্পণ করে। অথচ মাঝখানে কোনো বিপ্লব নাই, বিচ্ছেদের কোনো তীব্র আঘাত নাই, একের অবসান ও অন্যের আরম্ভের মধ্যে কী স্নিগ্ধ শাস্তি, কী সৌম্য সৌন্দর্ষ। দিনের আলোকে, সকল পদার্থের পরম্পরের ষে প্রভেদ, যে পার্থক্য, তাহাই বড়ো হইয়া, স্পষ্ট হইয়া, আমাদের প্রত্যক্ষ হইয়া উঠে। আলোক আমাদের পরস্পরের মধ্যে একটা ব্যবধানের কাজ করে—আমাদের প্রত্যেকের সীমা পরিস্ফুটন্ধপে নির্ণয় করিয়া দেয়। দিনের বেলায় আমরা যে-ষার আপন-আপন কাজের দ্বারা স্বতন্ত্র, সেই কাজের চেষ্টার সংঘাতে পরম্পরের মধ্যে বিরোধও বাধিয়া যায়। দিনে আমরা সকলেই নিজ নিজ শক্তি প্রয়োগ করিয়া জগতে নিজেকে জয়ী করিবার চেষ্টায় নিযুক্ত। তখন আমাদের আপন-অাপন কর্মশালাই আমাদের কাছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আর-সমস্ত বৃহৎ