পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రి(చి রবীন্দ্র-রচনাবলী । একেবারেই আমাদের না হইত, তবে ব্রহ্মের মধ্যে বিসর্জন দিতাম কী ? তবে ভক্তি তাহার সার্থকতালাভ করিত কেমন করিয়া ? সংসারেই আমাদেৱ কর্ম, আমাদের কতৃত্ব তাহাই আমাদের দিবার জিনিস। আমাদের প্রেমের চরম সার্থকতা হইবে,— যখন আমাদের সমস্ত কর্ম, সমস্ত কতৃত্ব আনন্দে ব্রহ্মকে সমর্পণ করিতে পারিব। নতুবা কৰ্ম আমাদের পক্ষে নিরর্থক ভার ও কতৃত্ব বস্তুত সংসারের দাসত্ব হইয় উঠবে। পতিব্ৰতা স্ত্রীর পক্ষে তাহার পতিগৃহের কর্মই গৌরবের, তাহা আনন্দের-সে কর্ম তাহার বন্ধন নহে, পতিপ্রেমের মধ্যেই তাহ প্রতিক্ষণেই মুক্তিলাভ করিতেছে-এক । পতিপ্রেমের মধ্যেই তাহার বিচিত্র কর্মের অখণ্ড ঐক্য, তাহার নানাদুঃখের এক আনন্দঅবসান, - ব্রহ্মের সংসারে আমরা যখন ব্রহ্মের কর্ম করিব, সকল কর্ম ব্রহ্মকে দিব, তখন সেই কর্ম এবং মুক্তি একই কথা হইয়া দাড়াইবে, তখন এক ব্রহ্মে আমাদের সমস্ত কর্মের বৈচিত্র্য বিলীন হইবে, সমস্ত দুঃখের ঝংকার একটি আনন্দসংগীতে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিবে। প্রেম যাহা দান করে, সেই দান যতই কঠিন হয়, তত তাহার সার্থকতার আনন্দ নিবিড় হয় । সস্তানের প্রতি জননীর স্নেহ দুঃখের দ্বারাই সম্পূর্ণ প্রতিমাত্রই কষ্টদ্বারা আপনাকে সমগ্রভাবে সপ্রমাণ করিয়া কৃতাৰ্থ হয় । ব্রহ্মের প্রতি যখন আমাদের প্রীতি জাগ্রত হইবে, তখন আমাদের সংসারধর্ম দুঃখক্লেশের দ্বারাই সার্থক হইবে, তাহা আমাদের প্রেমকেই প্রতিদিন উজ্জল করিবে, অলংকৃত করিবে ; ব্রহ্মের প্রতি আমাদের আত্মোৎসর্গকে দুঃখের মূল্যেই মূল্যবান করিয়া তুলিবে । হে প্রাণের প্রাণ, চক্ষুর চক্ষু, শ্রোত্রের শ্রোত্র, মনের মন, আমার দৃষ্টি, শ্রবণ, চিন্তা, আমার সমস্ত কর্ম, তোমার অভিমুখেই অহরহ চলিতেছে ইহা আমি জানি না বলিয়াই, ইহা আমার ইচ্ছাকৃত নহে বলিয়াই দুঃখ পাই । আমি সমস্তকেই অন্ধভাবে বলপূর্বক আমার বলিতে চাই বল রক্ষা হয় না, আমার কিছুই থাকে না । নিধিলের দিক হইতে, তোমার দিক হইতে সমস্ত নিজের দিকে টানিয়া-টানিয়া রাখিবার নিষ্ফল চেষ্টায় প্রতিদিন পীড়িত হইতে থাকি। আজ আমি আর কিছুই চাই না, আমি আজ পাইবার প্রার্থনা করিব না, আজ আমি দিতে চাই, দিবার শক্তি চাই । তোমার কাছে আমি আপনাকে পরিপূর্ণরূপে রিক্ত করিব, রিক্ত করিয়া পরিপূর্ণ করিব। তোমার সংসারে কর্মের দ্বারা তোমার যে সেবা করিব, তাহা নিরস্তর হইয়া আমার প্রেমকে জাগ্ৰত নিষ্ঠাবান করিয়া রাখুক,তোমার অমৃতসমূত্রের মধ্যে অতলম্পর্শ যে বিশ্রাম, তাহাও আমাকে অবসানহীন শান্তি দান করুক। তুমি দিনে দিনে স্তরে স্তরে আমাকে শতদল পদ্মের স্তায় বিশ্বজগতের মধ্যে বিকশিত করিয়া তোমারই পূজার অর্ঘ্যরূপে গ্রহণ করে। "י.• לסיכ