পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Joe রবীন্দ্র-রচনাবলী আনন্দে সমস্ত জীবজন্তুর প্রাণের চেষ্টা মনের চেষ্টা প্রতির চেষ্টা পুণ্যের চেষ্ট উৎসাহিত রহিয়াছে, তাহাতে আমার আনন্দ নাই, আমার আনন্দ আমার গর্ব কেবল উপকরণসামগ্রীতে,—এমন বৃহৎ জড়ত্বে আমি পরিবৃত ; যাহার অদৃশু অঙ্গুলিনির্দেশে জীবপ্রকৃতি অজ্ঞাত অকীর্তিত সহস্ৰ সহস্ৰ বৎসরের মধ্য দিয়া স্বাৰ্থ হইতে পরমার্থে, স্বেচ্ছাচার হইতে সংযমে, এককত হইতে সমাজতন্ত্রে উপনীত হইয়াছে, যিনি মহাভয়ং বজ্ৰমুদ্যতম, যিনি দম্বেন্ধন ইবানলঃ, সৰ্বকালে সর্বলোকে যিনি আমার ঈশ্বর, তাহার আদেশবাক্য আমার কর্ণগোচর হয় না, তাহার কর্মে আমার কোনো আস্থা নাই, কেবল জীবনের কয়েকদিনমাত্র যে-কয়েকটি লোককে পাচজন বলিয়া জানি, তাহাদেরই ভয়ে এবং তাহাদেরই চাটুবাক্যে চালিত হওয়াই আমার দুর্লভ মানবজন্মের একমাত্র লক্ষ্য – এমন মহামূঢ়তার দ্বারা আমি সমাচ্ছন্ন। আমি জানি না, আমি দেখিতে পাই না – বৃক্ষ ইৰ স্তন্ধে দিবি তিষ্ঠত্যেকস্তেনেদং পূর্ণং পুরুষেণ সর্বস্ । আমার কাছে সমস্ত জগৎ ছিন্নবিচ্ছিন্ন, সমস্ত বিজ্ঞান খণ্ডবিখণ্ড, সমস্ত জীবনের লক্ষ্য ক্ষুদ্রক্ষুদ্র সহস্র অংশে বিভক্ত বিদীর্ণ। হে অনস্ত বিশ্বসংসারের পরম এক পরমাত্মন, তুমি আমার সমস্ত চিত্তকে গ্রহণ করে । তুমি সমস্ত জগতের সঙ্গে সঙ্গে আমাকেও পূর্ণ করিয়া স্তন্ধ হইয়া রহিয়াছ, তোমার সেই পূর্ণতা আমি আমার দেহে-মনে, অন্তরে-বাহিরে, জ্ঞানে-কৰ্মে-ভাবে যেন প্রত্যক্ষ উপলব্ধি করিতে পারি। আমি আপনাকে সর্বতোভাবে তোমার দ্বারা আবৃত রাখিয়া নীরবে নিরভিমানে তোমার কর্ম করিতে চাই । অহরহ তুমি আদেশ করো, তুমি আহবান করে, তোমার প্রসন্নদৃষ্টিদ্বারা আমাকে আনন্দ দাও, তোমার দক্ষিণবাহুদ্বারা আমাকে বল দান করে । অবসাদের দুদিন যখন আসিবে, বন্ধুর যখন নিরস্ত হইবে, লোকেরা যখন লাঞ্ছনা করিবে, আমুকুল্য যখন দুর্লভ হইবে, তুমি আমাকে পরাস্ত-ভূলুষ্ঠিত হইতে দিয়ে না ; আমাকে সহস্রের মুখাপেক্ষী করিয়ো না ; আমাকে সহস্রের ভয়ে ভৗত, সহস্ত্রের বাক্যে বিচলিত, সহস্ত্রের আকর্ষণে বিক্ষিপ্ত হইতে যেন না হয় । একতুমি আমার চিত্তের একাসনে অধীশ্বর হও, আমার সমস্ত কর্মকে একাকী অধিকার করে, আমার সমস্ত অভিমানকে দমন করিয়া আমার সমস্ত প্রবৃত্তিকে তোমার পদপ্রান্তে একত্রে সংযত করিয়া রাখে । হে অক্ষরপুরুষ, পুরাতন ভারতবর্ষে তোমা হইতে যখন পুরাণী প্রজ্ঞা প্রস্থত হইয়াছিল, তখন আমাদের সরলদেয় পিতামহগণ ব্রহ্মের অভয় ব্রহ্মের আনন্দ যে কী, তাহ জানিয়াছিলেন । তাহার একের বলে বলী, একের তেজে তেজস্ব, একের গৌরবে মহীয়ান হইয়াছিলেন। পতিত ভারতবর্ষের জন্য পুনর্বার সেই প্রজ্ঞালোকিত নির্মল নিৰ্ভয় জ্যোতির্ময় দিন তোমার নিকটে প্রার্থনা করি। পৃথিবীতলে