পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

v®ዓ\» রবীন্দ্র-রচনাবলী দিকে লইয়া যায়, তবু ইহা মানবত্বের গুরুতর-অন্তরায়-স্বরূপ হইয়া উঠিতে পারে। ইহার প্রমাণ আমাদের সম্মুখেই, আমাদের নিকটেই রহিয়াছে। যুরোপীয় জাতিরা ইহাকেই তাহাদের চরম লক্ষ্য পরম ধর্ম বলিয়া গ্রহণ করিয়াছে। ইহা প্রতিদিনই সত্যকে আলোককে অমৃতকে যুরোপের দৃষ্টি হইতে আড়াল করিতেছে। যুরোপের স্বদেশাসক্তিই মানবত্বলাভের ইচ্ছাকে সার্থকতালাভের ইচ্ছাকে প্রবলবেগে প্রতিহত করিতেছে এবং যুরোপীয় সভ্যতা অধিকাংশ পৃথিবীর পক্ষে প্রকাও বিভীষিকা হইয়া উঠিতেছে। যুরোপ কেবলই মাটি চাহিতেছে, সোনা চাহিতেছে, প্রভুত্ব চাহিতেছে – এমন লোলুপভাবে এমন ভীষণভাবে চাহিতেছে যে, সত্য, আলোক ও অমৃতের জন্য মানবের যে চিরস্তন প্রার্থনা, তাহা যুরোপের কাছে উত্তরোত্তর প্রচ্ছন্ন হইয়া গিয়া তাহাকে উদাম করিয়া তুলিতেছে। ইহাই বিনাশের পথ – পথ নহে,- ইহাই মৃত্যু। আমাদের সম্মুখে, আমাদের অত্যন্ত নিকটে যুরোপের এই দৃষ্টান্ত আমাদিগকে প্রতিদিন মোহাভিভূত করিয়া তুলিতেছে। কিন্তু ভারতবর্ষকে এই কথাই কেবল মনে রাধিতে হইবে যে, সত্য-আলোক-অমৃতই প্রার্থনার সামগ্ৰী বিষয়াকুরাগই হউক আর দেশামুরাগই হউক, আপনার উদ্দেশু বা উদ্দেপ্তসাধনের উপায়ে যেখানেই এই সত্য, আলোক ও অমৃতকে অতিক্রম করিতে চাহে, সেখানেই তাহাকে অভিশাপ দিয়া বলিতে হুইবে – “বিনিপাত” ! বলা কঠিন, প্রলোভন প্রবল, ক্ষমতার মোহ অতিক্রম করা অতি দুঃসাধ্য, তবু ভারতবর্ষ এই কথা সুস্পষ্ট করিয়া বলিয়াছেন— অধৰ্মেশৈধতে তাবৎ ততো ভদ্রাণি পশুতি । ততঃ সপত্নান জয়তি সমূলভ বিনশ্যতি । >\つ> > ধর্মপ্রচার ‘এস আমরা ফললাভ করি’ বলিয়া হঠাৎ উৎসাহে তখনই পথে বাহির হইয়া পড়াই যে ফললাভের উপায়, তাহ কেহই বলিবেন না । কারণ কেবলমাত্র সদিচ্ছা এবং সদ্যুৎসাহের বলে ফল স্বষ্টি করা যায় না বীজ হইতে বৃক্ষ এবং বৃক্ষ হইতে ফল জন্মে। দলবদ্ধ উৎসাহের দ্বারাতেও সে-নিয়মের অন্তথা ঘটিতে পারে না । বীজ ও বৃক্ষের সহিত সম্পর্ক না রাখিয়া আমরা যদি অন্য উপায়ে ফললাভের আকাঙ্ক্ষা করি, তবে সেই বরগড়া কৃত্রিম ফল খেলার পক্ষে গৃহসজ্জার পক্ষে অতি উত্তম হইতে পারে –কিন্তু তাহা আমাদের যথার্থ ক্ষুধানিবৃত্তির পক্ষে অত্যন্ত অনুপযোগী হয়। আমাদের দেশে আধুনিক ধর্মসমাজে আমরা এই কথাটা ভাবি না। আমরা