পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পলাতকা পাঠা হত রুটি-লুচির সাথে । মঞ্জুলিকা দুবেলা সব আগাগোড়া রাধে আপন হাতে । একাদশী ইত্যাদি তার সকল তিথিতেই রাধার ফর্দ এই । বাপের ঘরটি আপনি মোছে ঝাড়ে রৌদ্রে দিয়ে গরম পোশাক আপনি তোলে পাড়ে । ডেস্কে বাক্সে কাগজপত্র সাজায় থাকে থাকে, ধোবার বাড়ির ফর্দ টুকে রাখে । গয়লানী আর মুদির হিসাব রাখতে চেষ্টা করে, ঠিক দিতে ভুল হলে তখন বাপের কাছে ধমক খেয়ে মরে । কাসুন্দি তার কোনোমতেই হয় না মায়ের মতো, তাই নিয়ে তার কত নালিশ শুনতে হয় । তা ছাড়া তার পান-সাজাটা মনের মতো নয় । মায়ের সঙ্গে তুলনাতে পদেপদেই ঘটে যে তার ক্রটি । মোটামুটি— আজকালকার মেয়েরা কেউ নয় সেকালের মতো । হয়ে নীরব নত, মঞ্জুল সব সহ করে, সর্বদাই সে শান্ত, কাজ করে অক্লান্ত । যেমন করে মাতা বারংবার শিশু ছেলের সহস্ৰ অণবদণর হেসে সকল বহন করেন মেহের কৌতুকে, তেমনি করেই সুপ্রসন্ন মুখে মঞ্জুলী তার বাপের নালিশ দণ্ডে দণ্ডে শোনে, হাসে মনে মনে । বাবার কাছে মায়ের স্মৃতি কতই মূল্যবান সেই কথাটা মনে ক’রে গর্বমুখে পূর্ণ তাহার প্রাণ । “আমার মায়ের যত্ন যে-জন পেয়েছে একবার আর কিছু কি পছন্দ হয় তার ”.