পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পলাতকা “জান তুমি তোমার মায়ের সাধ ছিল এই চিতে মোদের দোহার বিয়ে দিতে । সে ইচ্ছাটি তারি পুরাতে চাই যেমন করেই পারি। এমন করে আর কেন দিন কাটাই মিছিমিছি ।” “না না, ছি ছি, ছি ছি ।” এই ব’লে সে মঞ্জুলিক দু-হাত দিয়ে মুখখানি তার ঢেকে ছুটে গেল ঘরের থেকে । আপন ঘরে দুয়ার দিয়ে পড়ল মেঝের পরে— ঝরঝরিয়ে ঝরঝরিয়ে বুক ফেটে তার অশ্র ঝরে পড়ে । ভাবলে, “পোড়া মনের কথা এড়ায় নি ওঁর চোখ । আর কেন গো । এবার মরণ হ’ক ৷” মঞ্জুলিক বাপের সেবায় লাগল দ্বিগুণ ক’রে অষ্টপ্রহর ধরে । আবশ্যকটা সারা হলে তখন লাগে অনাবশুক কাজে, যে-বাসনটা মাজা হল আবার সেটা মাজে । দু-তিন ঘণ্টা পর একবার যে-ঘর ঝেড়েছে ফের ঝাড়ে সেই ঘর । কখন ষে মান, কখন যে তার আহার, ঠিক ছিল না তাহার । কাজের কামাই ছিল নাকে যতক্ষণ না রাত্রি এগারোটায় শ্রাস্ত হয়ে আপনি ঘুমে মেঝের পরে লোটায় । যে দেখল সে-ই অবাক হয়ে রইল চেয়ে, বললে, “ধন্তি মেয়ে ।” বাপ শুনে কয় বুক ফুলিয়ে, “গর্ব করি নেকে, কিন্তু তবু আমার মেয়ে সেটা স্মরণ রেখে ।