পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

क्षभ । পারি না। আমার মনের এতটুকু ভয়ে জগৎচরাচর বিভীষিকাময় হইয় উঠে, আমার মনের এতটুকু লোভে আমার নিকটে সমস্ত বৃহৎ সংসারের মুখঞ্জতে যেন বিকার ঘটে। তাই বলিতেছি, যিনি শান্ডং, র্তাহাকে সত্যভাবে অহুভব করিব কী করিয়া, যদি আমি শাস্ত না হই ? আমাদের অন্তঃকরণের চাঞ্চল্য কেবল নিজের তরঙ্গগুলাকেই বড়ো করিয়া দেখায়, তাহারই কল্লোল বিশ্বের অন্তরতম বাণীকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে । ዻ নানাদিকে আমাদের নানা প্রবৃত্তি যে উদাম হুইয়া চুটিয়াছে, আমাদের মনকে তাহার একবার এ-পথে একবার ও-পথে ছিড়িয়া লইয়া চলিয়াছে, ইহাদের সকলকে দৃঢ়রশ্মিদ্বার সংযত করিয়া সকলকে পরস্পরের সহিত সামগ্রস্তের নিয়মে আবদ্ধ করিয়া অন্তঃকরণের মধ্যে কতৃৰ্ত্তলাভ করিলে, চঞ্চল পরিধির মাঝখানে অচঞ্চল কেন্দ্রকে • স্থাপিত করিয়া নিজেকে স্থির করিতে পারিলে তবেই এই বিশ্বচরাচরের মধ্যে যিনি শাস্তং, র্তাহার উপাসনা তাহার উপলব্ধি সম্ভব হইতে পারে। জীবনের হ্রাসকে, শক্তির অভাবকে আমরা শাস্তি বলিয়া কল্পনা করি । জীবনহীন শান্তি তো মৃত্যু, শক্তিহীন শাস্তি তো লুপ্তি। সমস্ত জীবনের সমস্ত শক্তির অচলপ্রতিষ্ঠ আধারস্বরূপ বাহা বিরাজ করিতেছে, তাহাই শান্তি ; অদৃপ্ত থাকিয়া সমস্ত মুরকে যিনি সংগীত, সমস্ত ঘটনাকে যিনি ইতিহাস করিয়া তুলিতেছেন, একের সহিত অস্তের যিনি সেতু, সমস্ত দিনরাত্ৰি-মাসপক্ষ-ঋতুসংবৎসর চলিতে চলিতেও র্যাহার দ্বারা বিধৃত হইয়া আছে, তিনিই শাস্তম্। নিজের সমস্ত শক্তিকে ষে সাধক বিক্ষিপ্ত না করিয়া ধারণ করিতে পারিয়াছেন, তাহার নিকটে এই পরম শাস্তস্বরূপ প্রত্যক্ষ । বাস্পই যে রেলগাড়ি চালায়, তাহা নহে, বাষ্পকে যে স্থিরবুদ্ধি লৌহপূখলে বন্ধ করিয়াছে, সে-ই গাড়ি চালায়। গাড়ির কলটা চলিতেছে, গাড়ির চাকাণ্ডল ছুটিতেছে, তবুও গাড়ির মধ্যে গাড়ির এই চলাটাই কর্তা নহে, সমস্ত চলার মধ্যে অচল হইয়া যে আছে, যথেষ্টপরিমাণ চলাকে যথেষ্টপরিমাণ না-চলার দ্বারা ষে ব্যক্তি প্রতিমুহূর্তে স্থিরভাবে নিয়মিত করিতেছে, সেই কর্তা । একটা বৃহৎ কারখানার মধ্যে কোনো অজ্ঞ লোক যদি প্রবেশ করে, তবে সে মনে করে, এ একটা দানবীয় ব্যাপার ; চাকার প্রত্যেক আবর্তন, লৌহদণ্ডের প্রত্যেক আস্ফালন, বাস্পপুঞ্জের প্রত্যেক উচ্ছ্বাস তাহার মনকে একেবারে বিভ্রান্ত করিতে থাকে, কিন্তু অভিজ্ঞ ব্যক্তি এই সমস্ত নড়াচড়া-চলাকিরার মূলে একটি স্থির শান্তি দেখিতে পায়—সে জানে ভয়কে অভয় করিয়াছে কে, শক্তিকে সফল করিতেছে ক্ষে, গতির মধ্যে স্থিতি কোথায়, ফর্মের মধ্যে পরিণামটা কী। সে জানে এই শক্তি খাছাকে আশ্রয় করিয়া চলিতেছে, তাঁহা শান্ডি, সে জানে ৰেখানে এই শক্তির