পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 ১২ রবীন্দ্র-রচনাবলী সার্থক পরিণাম, সেখানেও শান্তি । শান্তির মধ্যে সমস্ত গতির, সমস্ত শক্তির তাৎপর্ব পাইয়া সে নির্ভয় হয়, সে আনন্দিত হয়। এই জগতের মধ্যে যে প্রবল প্রচণ্ড শক্তি কেবলমাত্র শক্তিরূপে বিভীষিকা, শাস্তং তাহাকেই ফলে-ফুলে প্ৰাণে-সৌন্দর্বে মঙ্গলময় করিয়া তুলিয়াছেন। কারণ, বিনি শাস্তং, তিনিই শিবং । এই শান্তস্বরূপ জগতের সমস্ত উদামশক্তিকে ধারণ করিয়া একটি মঙ্গললক্ষ্যের দিকে লইয়া চলিয়াছেন। শক্তি এই শাস্তি হইতে উদগত ও শাস্তির দ্বারা বিধৃত বলিয়াই তাহা মঙ্গলৰূপে প্রকাশিত। তাহ ধাত্রীর মতো নিখিলজগৎকে অনাদিকাল হইতে অনিদ্রভাবে প্রত্যেক মুহূর্তেই রক্ষা করিতেছে। তাহ সকলের মাঝখানে আসীন হইয়া বিশ্বসংসারের ছোটে হইতে বড়ো পর্যন্ত প্রত্যেক পদার্থকে পরস্পরের সহিত অবিচ্ছেদ্য সম্বন্ধবন্ধনে বাধিয়া তুলিতেছে। পৃথিবীর ধূলিকণাটুকুও লক্ষযোজনদুরবর্তী স্বর্ধচন্দ্রগ্রহতারার সঙ্গে নাড়ির যোগে যুক্ত। কেহ । কাহারও পক্ষে অনাবশুক নহে। এক বিপুল পরিবার এক বিরাট কলেবর রূপে নিখিল বিশ্ব তাহার প্রত্যেক অংশ-প্রত্যংশ তাহার প্রত্যেক অণুপরমাণুর মধ্য দিয়া একই রক্ষণস্থত্রে, একই পালনস্থত্রে গ্রথিত । সেই রক্ষণী শক্তি সেই পালনী শক্তি নানা মূর্তি ধরিয়া জগতে সঞ্চরণ করিতেছে ; মৃত্যু তাহার এক রূপ, ক্ষতি তাহার এক রূপ, দুঃখ তাহার এক রূপ ; সেই মৃত্যু, ক্ষতি ও দুঃখের মধ্য দিয়াও নবতর প্রকাশের লীলা আনন্দে অভিব্যক্ত হইয়া উঠিতেছে। জন্মমৃতু্য সুখদুঃখ লাভক্ষতি সকলেরই মধ্যেই শিবং শাস্তরূপে বিরাজমান। নছিলে এ-সকল ভার এক মুহূর্ত বহন করিত কে । নহিলে আজ যাহা সম্বন্ধবন্ধনরূপে আমাদের পরম্পরকে আকর্ষণ করিয়া রাখিয়াছে, তাহা যে আঘাত করিয়া আমাদিগকে চূর্ণ করিয়া ফেলিত। যাহা আলিঙ্গন, তাহাই যে পীড়ন হুইয়া উঠিত। আজ স্বৰ্ষ আমার মঙ্গল করিতেছে, গ্ৰহতারা আমার মঙ্গল করিতেছে, জল-স্থল-আকাশ আমার মঙ্গল করিতেছে, যে বিশ্বের একটি বালুকণাকেও আমি সম্পূর্ণ জানি না, তাহারই বিরাট প্রাঙ্গণে আমি ঘরের ছেলের মতো নিশ্চিন্তমনে খেলা করিতেছি ; আমিও যেমন সকলের, সকলেও তেমনি আমার—ইহা কেমন করিয়া ঘটিল ? যিনি এই প্রশ্নের একটিমাত্র উত্তর, তিনি নিখিলের সকল আকর্ষণ সকল সম্বন্ধ সকল কর্মের মধ্যে নিগৃঢ় হইয়া নিস্তব্ধ হইয়া সকলকে রক্ষা করিতেছেন। তিনি শিবম্। 酶 এই শিবস্বরূপকে সত্যভাবে উপলব্ধি করিতে হইলে আমাদিগকেও সমস্ত জশিৰ পরিহার করিয়া শিব হইতে হইবে। অর্থাৎ শুভকর্মে প্রবৃত্ত হইতে হইবে। যেমন শক্তিহীনতার মধ্যে শাস্তি নাই, তেমনি কর্মহীনতার মধ্যে মঙ্গলকে কেছ পাইতে পারে