পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8** - রবীন্দ্র-রচনাবলী স্বাতন্ত্র্যেও পূর্ণতালাভ করিব এবং মিলনেও নিজেকে পূর্ণভাবে সমর্পণ কৰিব, ইহা হইলেই মানুষের সার্থকতা ঘটে। অর্জন করিয়া আমার পুষ্টি হইবে এবং বর্জন করিয়া আমার আনন্দ হইবে, জগতের মধ্যে এই দুই বিপরীত নীতির মিলন দেখা ধাইতেছে। ফলত, নিজেকে যদি পূর্ণ করিয়া ন সঞ্চিত করি, তবে নিজেকে পূর্ণরূপে দান করিব কী করিয়া । সে কতটুকু দান হইবে । যতবড়ে অহংকার তাহ বিসর্জন করিয়া ততবড়ো প্রেম। এই ষে আমি, অতিক্ষুদ্র আমি, এতবড়ো জগতের মাঝখানেও সেই আমি স্বতন্ত্র । চারিদিকে কত তেজ কত বেগ কত বস্তু কত ভার, তাহার আর সীমা নাই, কিন্তু আমার অহংকারকে এই বিশ্বব্রহ্মাও চূর্ণ করিতে পারে নাই, আমি এতটুকু হইলেও স্বতন্ত্র। আমার ষে অহংকার সকলের মধ্যেও ক্ষুত্র আমাকে ঠেলিয়। রাধিয়াছে, এই অহংকার যে ঈশ্বরের ভোগের জন্ত প্রস্তুত হইতেছে। ইহা নিঃশেষ করিয়া তাহাকে দিয়া ফেলিলে তবেই যে আনন্দের চূড়ান্ত । ইহাকে জাগাইবার সমস্ত দুঃসহ দুঃখের তবেই ষে অবসান। ভগবানের এই ভোগের সামগ্ৰীটিকে নষ্ট করিয়া কেলিবে কে। আমাদের স্বাতন্ত্র্যকে ঈশ্বরে সম্পূর্ণ সমর্পণ করিবার পূর্ববর্তী অবস্থায় যত-কিছু স্বস্ব। তখনই একদিকে স্বার্থ, আর একদিকে প্রেম ; একদিকে প্রবৃত্তি, আর একদিকে নিবৃত্তি। সেই দোলায়মান অবস্থায়, এই স্বন্ধের মাঝখানেই যাহা সৌন্দর্ধকে ফুটাইয় তোলে, যাহা ঐক্যের আদর্শ রক্ষা করে, তাহাকেই বলি মঙ্গল। মাহ একদিকে আমার স্বাতন্ত্র্য, অন্যদিকে অন্তের স্বাতন্ত্র্য স্বীকার করিয়াও পরম্পরের আঘাতে বেসুর বাজাইয়া তোলে না, যাহা স্বতন্ত্রকে এক সমগ্রের শাস্তি দান করে, যাহা দুই অহংকারকে এক সৌন্দর্ধের পরিণয়স্থত্রে বাধিয়া দেয়, তাহাই মঙ্গল। শক্তি স্বাতন্ত্র্যকে বাড়াইয় তোলে, মঙ্গল স্বাতন্ত্র্যকে সুন্দর করে, প্রেম স্বাতন্ত্র্যকে বিসর্জন দেয় । মঙ্গল সেই শক্তি ও প্রেমের মাঝখানে থাকিয়া প্রবল অর্জনকে একান্ত বিসর্জনের দিকেই অগ্রসর করিতে থাকে। এই দ্বন্ধের অবস্থাতেই মঙ্গলের রশ্মি লাগিয়া মানবসংসারে সৌন্দৰ প্ৰাতঃসন্ধ্যার মেঘের মতো বিচিত্র হইয়া উঠে । নিজের সঙ্গে পরের, স্বার্থের সঙ্গে প্রেমের যেখানে সংঘাত, সেখানে মঙ্গলকে রক্ষা করা বড়ো সুন্দর এবং বড়ো কঠিন । কবিত্ব যেমন সুন্দর তেমনি সুন্দর, এবং কবিত্ত্ব যেমন কঠিন তেমনি কঠিন । J.

  1. কৰি যে-ভাষায় কৰিবপ্রকাশ করিতে চায়, সে-ভাষা তো তাহার নিজের श* नप्र। কবি জরিবার বহুকাল পূর্বেই সে-ভাষা আপনার একটা স্বাতন্ত্র্য ফুটাইরা তুলিয়াছে। কৰি ৰে-ভাবটি যেমন করিয়া ব্যক্ত করিতে চায়, ভাষা ঠিক তেমনটি করিয়া রাশ মানে ।