পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

of see জঝিতাম। সেই কবচেই আমাদিগকে বহুদিনের অধীনতা ও দুঃখদারিত্র্যের মধ্যেও বঁাচাইয়া রাখিয়াছে—আমাদের সম্মান নষ্ট করিতে পারে নাই। কারণ, আমাদের সে সম্মান বাহিরের আহরণ-করা ধন ছিল না, সে আমাদের অস্তরের সামগ্রী ছিল । সেই সহজাত কবচখানি আমাদের কাছ হইতে কে জুলাইয়া লইল । ইহাতেই আমাদের আত্মরক্ষার উপায় চলিয়া গেছে। এখন আমরা বিশ্বের মধ্যে লজ্জিত। এখন আমাদের বেশে-ভূষায় আয়োজনে-উপকরণে একটু কোথাও কিছু খাটো পড়িয়া গেলেই আমরা আর মাথা তুলিতে পারি না । সম্মান এখন বাহিরের জিনিস হইয়া পড়িয়াছে, তাই উপাধির জন্য খ্যাতির জন্ত আমরা বাহিরের দিকে ছুটিয়াছি, বাহিরের আড়ম্বরকে কেবলই বাড়াইয়া তুলিতেছি, এবং কোথাও একটু-কিছু ছিদ্র বাহির হইবার উপক্রম হইলেই তাহাকে মিথ্যার তালি দিয়া ঢাকা দিবার চেষ্টা করিতেছি । কিন্তু ইহার • অন্ত কোথায় ? যে ভদ্রতা আমাদের অস্তরের সামগ্রী ছিল, তাহাকে আজ যদি বাহিরে টানিয়া জুতার দোকান, কাপড়ের দোকান, ঘোড়ার হাট এবং গাড়ির কারখানায় ঘোরাইতে আরম্ভ করি, তবে কোথায় লইয়া গিয়া তাহাকে বলিব, বল, হুইয়াছে, এখন বিশ্রাম করে । আমরা সন্তোষকেই মুখের পূর্ণতা বলিয়া জানিতাম ; কারণ, সন্তোষ অন্তরের সামগ্ৰী—এখন সেই মুখকে যদি হাটে-হাটে ঘাটে-ঘাটে খুজিয়া ফিরিতে হয়, তবে কবে বলিতে পারিব, মুখ পাইয়াছি। এখন আমাদের ভদ্রতাকে সন্ত কাপড়ে অপমান করে, বিলাতি গৃহসজ্জার অভাবে উপহাস করে, চেকবহির অঙ্কপাতের নূনতায় তাহার প্রতি কলঙ্কপাত করে—এমন ভদ্রতাকে মজুরের মতে বহন করিয়া গোঁৱৰবোধ করা ৰে কত লজ্জাকর, তাহাই আমরা জুলিতে বসিয়াছি। আর যে-সকল পরিণামহীন উত্তেজনা উন্মাদনাকে আমরা মুখ বলিয়া বরণ করিয়া লইয়াছি, তাহার দ্বারা আমাদের মতো বহির্বিষয়ে পরাধীন জাতিকে অন্তঃকরণেও দাসাচুদাস করিয়াছে। কিন্তু তবু বলিতেছি, এই উপসর্গ এখনও আমাদের মজার মধ্যে প্রবেশ করে নাই। এখনও ইহা বাহিরেই পড়িয়া আছে ; এবং বাহিরে আছে বলিয়াই ইহার কলরব এত বেশি–সেইজন্যই ইহার এত আতিশষ্য ও অতিশয়োক্তির প্রয়োজন হয়। * এখনও এ আমাদের গভীরতর স্বভাবের অনুগত হয় নাই বলিয়াই সস্তরণমূঢ়ের সাঁতারকাটার মতো ইহাকে লইয়া আমাদিগকে এমন উন্মত্তের স্তায় আক্ষালন করিতে হয় । 植 轉 কিন্তু একবার কেহ যদি আমাদের মধ্যে দাঙ্গাইয়া ৰখাৰ অধিকারের সহিত এ-কথা বলেন যে, "অসম্পূর্ণ প্রয়াসে, উন্মত্ত প্রতিযোগিতায়, অনিত্য ঐশ্বর্ষে আমাদের শ্রেয় নছে—জীবনের একটি পরিপূর্ণ পরিণাম আছে, সকল কর্ম সকল সাধনার একটি পরিপূর্ণ