পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন । 8לטא আমাদের ইচ্ছাকে পরাস্ত হতে হয়—যা আমরা ছাড়তে চাই নে তা আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় । অতএব আমাদের ইচ্ছাকেও এই বিশ্বধর্মের মুরে বাঁধতে হবে । - বিশ্বধর্মের সঙ্গে আমাদের ইচ্ছাকে মেলাতে পারলেই আমরা বস্তুত স্বাধীন হই। স্বাধীনতার নিয়মই তাই। আমি স্বেচ্ছায় বিশ্বের সঙ্গে যোগ না দিই যদি, তাহলেই বিশ্ব আমার প্রতি জবরদস্তি করে আমাকে তার অস্থগত করবে— তখন আমার আনন্দ থাকবে না, গৌরব থাকবে না তখন দাসের মতে সংসারের কানমলা খাব ৷ অতএব একদিন এ কথা যেন সংসার না বলতে পারে যে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নেব, আমিই যেন বলতে পারি আমি ত্যাগ করব। কিন্তু প্রতিদিনই যদি ইচ্ছাকে এই ত্যাগের অভিমুখে প্রস্তুত না করি তবে মৃত্যু ও ক্ষতি যখন তার বড়ে বড়ো দাবি নিয়ে আমাদের সম্মুখে এসে দাড়াবে তখন তাকে কোনোমতে ফাকি দিতে ইচ্ছা হবে অথচ সেখানে একেবারেই ফাকি চলবে না—সে বড়ে দুঃখের দিন উপস্থিত হবে। এই ত্যাগের দ্বারা আমরা দারিদ্র্য ও রিক্ততা লাভ করি এমন কথা যেন আমাদের মনে না হয়। পূর্ণতররূপে লাভ করবার জন্তেই আমাদের ত্যাগ । আমরা যেটা থেকে বেরিয়ে না আসব সেটাকে আমরা পাব না । গর্ভের মধ্যে আবৃত শিশু তার মাকে পায় না-সে যখন নাড়ির বন্ধন কাটিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়, স্বাধীন হয়, তখনই সে তার মাকে পূর্ণতরভাবে পায় । o এই জগতের গর্তাবরণের মধ্যে থেকে আমাদের সেই রকম করে মুক্ত হতে হবে— তাহলেই যথার্থভাবে আমরা জগৎকে পাব—-কারণ, স্বাধীনভাবে পাব । আমরা জগতের মধ্যে বন্ধ হয়ে ভ্রণের মতো জগৎকে দেখতেই পাই নে—যিনি মুক্ত হয়েছেন, তিনিই জগৎকে জানেন, জগৎকে পান। 離 এইজন্তই বলছি, যে লোক সংসারের ভিতরে জড়িয়ে রয়েছে সেই ষে আসল সংসাৰী তা নয়—যে সংসার থেকে বেরিয়ে এসেছে সেই সংসারী—কারণ, সে তখন সংসারের থাকে ন সংসার তারই হয়। সেই সত্য করে বলতে পারে আমার সংসার। ঘোড়া গাড়ির সঙ্গে লাগামে বদ্ধ হয়ে গাড়ি চালায়—কিন্তু ঘোড়া কি বলতে পারে গাড়িটা জামার r বৰত গাড়ির চাকার সঙ্গে তার বেশি তফাত কী ? ষে সারৰি মুক্ত থেকে গাড়ি চালায় গাড়ির উপরে কতৃত্ব তারই। যদি কর্ত হতে চাই তবে মুক্ত হতে হবে। এইজন্ত গীতা সেই যোগকেই কর্মযোগ