পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ዓ • রবীন্দ্র-রচনাবলী ষে-রূপে তিনি প্রকাশ পাচ্ছেন এই তো তার বন্ধনের রূপ। এই বন্ধনেই তিনি আমাদের কাছে আপন, আমাদের কাছে সুন্দর। এই বন্ধন তার আমাদের সঙ্গে প্রণয়বন্ধন । এই তার নিজকৃত স্বাধীন বন্ধনেই তো তিনি আমাদের সখা, আমাদের পিতা । এই বন্ধনে যদি তিনি ধরা না দিতেন তাহলে আমরা বলতে পারতুম না যে, স এব বন্ধুর্জনিতা স বিধাতা, তিনিই বন্ধু তিনিই পিতা তিনিই বিধাতা। এত বড়ে একটা আশ্চর্য কথা মানুষের মুখ দিয়ে বের হতেই পারত না । কোনট বড়ো কথা ? ঈশ্বর শুদ্ধবুদ্ধমুক্ত, এইটে ? না, তিনি আমাদের সঙ্গে পিতৃত্বে সধিত্বে পতিত্বে বদ্ধ—এইটে ? দুটোই সমান বড়ো কথা । অধীনতাকে অত্যন্ত ছোটো করে দেখে তার সম্বন্ধে আমাদের একটা হীন সংস্কার হয়ে গেছে। এ রকম অন্ধ সংস্কার আরও আমাদের অনেক আছে । যেমন আমরা ছোটোকে মনে করি তুচ্ছ, বড়োকেই মনে করি মহৎ–যেন গণিতশাস্ত্রের দ্বারা কাউকে মহত্ব দিতে পারে ! তেমনি সীমাকে আমরা গাল দিয়ে থমকি । যেন, সীমা জিনিসটা যে কী তা আমরা কিছুই জানি ! সীমা একটি পরমাশ্চর্য রহস্ত। এই সীমাই তো অসীমকে প্রকাশ করছে । এ কী অনির্বচনীয়। এর কী আশ্চর্য রূপ, কী আশ্চর্য গুণ, কী আশ্চর্য বিকাশ । এক রূপ হতে আর এক রূপ, এক গুণ হতে আর এক গুণ, এক শক্তি হতে আর এক শক্তি—এরই বা নাশ কোথায় । এরই বা সীমা কোনখানে। সীমা যে ধারণাতীত বৈচিত্র্যে, যে অগণনীয় বহুলত্ত্বে, যে অশেষ পরিবর্তনপরম্পরায় প্রকাশ পাচ্ছে তাকে অবজ্ঞা করতে পারে এতবড়ো সাধ্য আছে কার । বস্তুত আমরা নিজের ভাষাকেই নিজে অবজ্ঞা করি কিন্তু সীমা পদার্থকে অবজ্ঞা করি এমন অধিকার আমাদের নেই। অসীমের অপেক্ষা সীমা কোনো অংশেই কম আশ্চর্য নয়, অব্যক্তের অপেক্ষা ব্যক্ত কোনোমতেই অপ্রদ্ধেয় নয় । স্বাধীনতা অধীনতা নিয়েও আমরা কথার খেলা করি। অধীনতাও ষে স্বাধীনতার সঙ্গেই এক আসনে বসে রাজত্ব করে একথা আমরা স্কুলে যাই । স্বাধীনতাই যে আমরা চাই তা নয়, অধীনতাও আমরা চাই । যে চাওয়াতে আমাদের ভিতরক্ষার এই দুই চাওয়ারই সম্পূর্ণ সামঞ্জস্ত হয় সেই হচ্ছে প্রেমের চাওয়া । বন্ধনকে স্বীকার করে বন্ধনকে অতিক্রম করব এই হচ্ছে প্রেমের কাজ । প্রেম যেমন স্বাধীন এমন স্বাধীন আর দ্বিতীয় কেউ নেই আবার প্রেমের যে অধীনতা এতবড়ো অধীনতাই বা জগতে কোথায় আছে । 劇 অধীনতা জিনিসটা ষে কতো বড়ো মহিমান্বিত বৈষ্ণবধর্মে সেইটে