পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8.ఆ , রবীন্দ্র-রচনাবলী ছবি যে আঁকে তার পট চাই, তুলি চাই, রং চাই, তার বাইরের আয়োজন অনেক । তার পরে সে যখন আঁকতে থাকে তখন তার আরম্ভের রেখাতে সমস্ত ছবির আনন্দ দেখা যায় না—অনেক রেখা এবং অনেক বর্ণ মিললে পর তবেই পরিণামের আভাস পাওয়া যায়। তার পরে, আঁকা হয়ে গেলে চিত্রকর চলে গেলেও সে ছবি স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকে—চিত্রকরের সঙ্গে তার আর কোনো একান্ত সম্বন্ধ থাকে না । কিন্তু ষে গান করে গানের সমস্ত আয়োজন তার নিজেরই মধ্যে—আনন্দ বার, সুর তারই, কথাও তার—কোনোটাই বাইরের নয় । হৃদয় যেন একেবারে অব্যবহিতভাবে নিজেকে প্রকাশ করে, কোনো উপকরণের ব্যবধানও তার নেই। এইজন্তে গান যদিচ একটা সম্পূর্ণতার অপেক্ষ রাখে তবু তার প্রত্যেক অসম্পূর্ণ সুরটিও হৃদয়কে ষেন প্রকাশ করতে থাকে। হৃদয়ের এই প্রকাশে শুধু যে উপকরণের ব্যবধান নেই তা নয়—কথা জিনিসটাও একটা ব্যবধান –কেননা ভেবে তার অর্থ বুঝতে হয়—গানে সেই অর্থ বোঝবারও প্রয়োজন নই—কোনো অর্থ না থাকলেও কেবলমাত্র স্বরই যা বলবার তা অনির্বচনীয় রকম করে বলে । তার পরে আবার গানের সঙ্গে গায়কের এক মুহূর্তও বিচ্ছেদ নেই—গান ফেলে রেখে গায়ক চলে গেলে গানও তার সঙ্গে সঙ্গেই চলে যায়। গায়কের প্রাণের সঙ্গে শক্তির সঙ্গে আনন্দের সঙ্গে গানের মুর একেবারে চিরমিলিত হয়েই প্রকাশ পায় । যেখানে গান সেখানেই গায়ক, এর আর কোনো ব্যত্যয় নেই। এই বিশ্বসংগীতটিও তার গায়ক থেকে এক মুহূর্তও ছাড়া নেই। র্তার বাইরের উপকরণ থেকেও এ গড় নয়। একেবারে তারই চিত্ত তারই নিশ্বাসে তারই আনন্দরূপ ধরে উঠছে। এ গান একেবারে সম্পূর্ণ হয়ে তার অন্তরে রয়েছে, অথচ ক্রমাভিব্যক্তরূপে প্রকাশ পাচ্ছে, কিন্তু এর প্রত্যেক সুরই সেই সম্পূর্ণ গানের আবির্ভাব এক মুরকে আরএক সুরের সঙ্গে আনন্দে সংযুক্ত করে চলেছে। এই বিশ্বগানের যখন কোনো বচনগম্য অর্থও না পাই তখনও আমাদের চিত্তের কাছে এর প্রকাশ কোনো বাধা পায় না। এ যে চিত্তের কাছে চিত্তের অব্যবহিত প্রকাশ । গায়ত্রীমন্ত্রে তাই তো শুনতে পাই সেই বিশ্বসবিতার ভর্গ তার তেজ তার শক্তি ভূভূবঃ স্বঃ হয়ে কেবলই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠছে এবং তারই সেই এক শক্তি কেবলই ধীরূপে আমাদের অস্তরে বিকীর্ণ হচ্ছে । কেবলই উঠছে, কেবলই আসছে সুরের পর মুর, সুরের পর মুর। 都 ஆன কাল কৃষ্ণএকাদশীর নিস্তৃত রাত্রের নিবিড় অন্ধকারকে পূর্ণ করে সেই বীনকার তার রম্য বীণা বাজাচ্ছিলেন ; জগতের প্রান্তে আমি একলা দাড়িয়ে শুনছিলুম; সেই ।